দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নির্বাচিত হাসির কবিতা’

3 months ago 11

নন্দলালকে চেনেন না—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভীতু নন্দলালকে নিয়ে লেখা কবিতা ছোট-বড় সবার মুখে মুখে। আপনাদের যদি একটু স্মরণ করিয়ে দিই, তাহলে সহজেই চিনবেন। কবি বলেছেন, ‘নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ—/ স্বদেশের তরে, যা করেই হোক্, রাখিবেই সে জীবন।/ সকলে বলিল—‘আ-হা-হা কর কী, কর কী, নন্দলাল?’/ নন্দ বলিল—‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?/ আমি না করিলে, কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’/ তখন সকলে বলিল—‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ!’’

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো পরের প্যারায়। কবি বলেছেন, ‘নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা!/ সকলে বলিল—‘যাও না নন্দ, কর না ভা’য়ের সেবা!’/ নন্দ বলিল— ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই—/ না হয় দিলাম—কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কী?/ বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’;/ তখন সকলে বলিল—‘হাঁ হাঁ হাঁ তা বটে, তা বটে, ঠিক!’’

এভাবেই নন্দলালকে উপস্থাপন করেছেন কবি। আর সেই নন্দলালের স্রষ্টা কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। শুধু নন্দলালই নয়; এমন অনেক হাসির কবিতা রচনা করেছেন ডিএল রায়। সেসব কবিতা নিয়েই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশ করেছিল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নির্বাচিত হাসির কবিতা’। বইটি এতই জনপ্রিয় যে, ২০১৮ সালেই এর ১৩তম মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে।

শহীদুল ইসলাম সম্পাদিত বইটিতে স্থান পেয়েছে—‘নন্দলাল’; ‘হতে পারতাম’; ‘হোলো কী’; ‘আমি যদি পিঠে তোর ঐ’; ‘সুরা’; ‘প্রণয়ের ইতিহাস’; ‘পূর্ণিমা-মিলন’; ‘বিলাত ফের্তা’; ‘বেশ করেছ’; ‘নতুন কিছু করো’; ‘যেমনটি চাই তেমন হয় না’; ‘বিলেত’; ‘কৃষ্ণ-রাধিকা-সংবাদ’; ‘কবি’; ‘তান্সান্-বিক্রমাদিত্য-সংবাদ’; ‘বুড়োবুড়ি’; ‘সন্দেশ’; ‘বদলে গেল মতটা’; ‘খুসরোজ’; ‘বসন্ত বর্ণনা’ এবং ‘নূতন চাই’।

আনন্দের বিষয় হচ্ছে—৩২ পৃষ্ঠার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নির্বাচিত হাসির কবিতা’ বইটির মুদ্রিত মূল্য ১২০ টাকা। বইটি সংগ্রহে রেখে মাঝে মধ্যেই পড়া যেতে পারে। কবিতাগুলো কবির সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও এ যুগে বসেও প্রত্যেকটি কবিতা অসাধারণ মনে হবে। অবসর সময়ে নির্মল আনন্দের জন্য উত্তম একটি বই।

জেনে রাখা ভালো—দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) একাধারে কবি, নাট্যকার ও গীতিকার। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। বাবা সুকণ্ঠ গায়ক কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের দেওয়ান। মা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত প্রভুর বংশধর। তাঁর দুই অগ্রজ রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক ভ্রাতৃজায়াও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article