নওগাঁয় সারের কৃত্রিম সংকট, আলু চাষ নিয়ে শঙ্কা

2 hours ago 4

নওগাঁয় আগাম আলু আবাদের মৌসুমকে সামনে রেখে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। প্রতি ৫০ কেজি ডিএপি সারের বস্তায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আলুর অনিশ্চিত বাজার দরের এ মুহূর্তে সার ব্যবসায়ীদের এ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চলতি মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আলু চাষিদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে ডিলাররা হঠাৎ সারের দাম বাড়িয়েছেন। আমন রোপণের জন্য চাষিদের জিম্মি করে বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য করছেন ব্যবসায়ীরা। একই সার আলু আবাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন। এই মুহূর্তে বেশি দামে সার কিনে আলুর আবাদ করা চাষিদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সারের বাজারের এ নৈরাজ্য কাটাতে ডিলারদের নজরদারিতে রাখার দাবি তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে আলু রোপণ। এ সময়ের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম আলু চাষ করবেন চাষিরা। চলতি বছর এর বিপরীতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪১ হাজার ৯২৮ টন সার বরাদ্দ হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি ৫০ কেজি বস্তা ইউরিয়া সার ও টিএসপি সার ১ হাজার ৩৫০ টাকা, এমওপি সার ১ হাজার টাকা এবং ডিএপি সার ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন পরিবেশকরা (ডিলার)।

মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাশ ইউনিয়নের চককান্দেরপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল মন্ডল বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। প্রতি বস্তা ডিএপি সার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে এ দামে সার কিনে আলু আবাদ করা সম্ভব নয়। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী এমনিতেই আলুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই আলু চাষ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

পত্নীতলা উপজেলার খিরসিন গ্রামের কৃষক গাফফার বলেন, সম্প্রতি চাষাবাদে ডিএপি সার কেনায় প্রতি বিঘায় তার বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে অন্তত ৫০০ টাকা। সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে বাজারে সার পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে বেশি দামে খুচরা দোকান থেকে কিনতে হয়। ৫ কেজি ডিএপি সার ১৭০ টাকা মূল্যে কিনতে হয়েছে। বেশি দামে সার কেনায় আবাদেও খরচ বেশি হচ্ছে।

এমন অভিযোগ শুধু রেজাউল ও গাফফারের নয়। নওগাঁ সদর উপজেলার কৃষক শরিফুল ইসলাম ও আমজাদ হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরাও বাড়তি দামে সার কিনে আবাদ করছেন।

তারা বলেন, সার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বস্তা প্রতি ডিএপি সারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছে সারের ডিলাররা। এতে সারসহ আনুষঙ্গিক উপকরণে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে। এ নৈরাজ্য কাটাতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং প্রয়োজন।

মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা মোড়ের খুচরা সার ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল ও গোলাম রাব্বানী বলেন, ইউরিয়া, এমওপি ও টিএসপি সারের দাম ঠিক আছে। তবে ডিএপি সারের দাম বাড়তি। ডিলারদের কাছ থেকে বাড়তি দামে সার কিনে কিছুটা লাভে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। ৫ কেজি ডিএপি সার ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিলাররা সিন্ডিকেট করে ডিএপি সারের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) নওগাঁ জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিসিআইসি সার পরিবেশক মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। ডিলাররা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করে কৃষকদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। নতুন ডিলার নিয়োগের অপচেষ্টায় লিপ্ত একটি পক্ষ এসব গুজব ছড়াচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে কথা হলে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হোমায়রা মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ সারের সরবরাহ রয়েছে। সুতরাং এখানে কৃত্রিম সংকটের সুযোগ নেই। কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করছে এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এএইচআরএন/এনএইচআর/জেআইএম

Read Entire Article