জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চেইন অব কমান্ড’ ও ‘ভার্সিটির কালচার’ শেখানোর নামে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের এ অভিযোগ ওঠে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেটসংলগ্ন চিকনা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী ৩০ শিক্ষার্থী।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ওই বিভাগের ১৩ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। কেন তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব লিখিতভাবে বিভাগীয় প্রধানের কাছে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ, ১৮তম আবর্তন) শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, ১৭তম আবর্তন) শিক্ষার্থীরা ‘চেইন অব কমান্ড’ ও ‘ভার্সিটির কালচার’ শেখানোর নামে ‘অমানুষিক’ নির্যাতন করে থাকেন। ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের আটকে রাখা হয়। কারও অসুস্থতা বা কোনো অসুবিধা বিবেচনা করা হয়নি। প্রায় রাতে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু হলের ৪১৬ ও ৮২৪ নম্বর কক্ষে ও জঙ্গলবাড়িতে নিয়ে হেনস্তা করে ফজরের সময় ছাড়া হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমাদের ব্যাচের ৩২ শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে মানসিক অত্যাচার করা হয়, যার ফলে সেখানে উপস্থিত দুজন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ রকম মিটিংয়ের আগেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, সিনিয়রদের জেলাসহ নাম আমাদের মুখস্থ করতে হয়। এমনকি কোন সিনিয়রের কি পছন্দ তাও মনে রাখতে বলা হয়। জোরপূর্বক ছেলেদেরকে নারী সিনিয়রের নম্বর দিয়ে বলা হয় প্রপোজ করে কুপ্রস্তাব দিতে। এ ছাড়া নানানভাবে মেয়েদের হেনস্তা করা হয়। এমনকি অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়া হয়। এসব কারণে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের ক্লাসমেট লাইজু একবার এসব বিষয়ের ভিডিও সাংবাদিকদের জানাতে চায়। এই খবর জেনে আমাদের ওপর জোর করা হয় যেন আমরা তার সঙ্গে কথা না বলি। তাকে যেন আমরা বয়কট করি এর জন্য সিনিয়ররা আমাদেরকে চাপ দেয়।
এদিকে বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সভা হয়। সভা শেষে দ্বিতীয় বর্ষের ১৩ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা হচ্ছেন আশরাফ সিদ্দিকী, সারজিল হাসান আকন্দ, শায়েরি সিদ্দিকা নিঝুম, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. ইমরান হোসেন, নুসরাত জাহান ডানা, লিজা তালুকদার, ইফফাত মুশতারী পুনম, তামান্না আকতার, অর্পিতা রায় পায়েল, মারুফ আহমেদ, রাইসা ইসলাম জিম ও তাসমিয়া আনজুম ভুঁইয়া ফারিহা।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার প্রক্টর অফিস থেকে ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হওয়ায় শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, কিছু নবীন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সিনিয়র ব্যাচ বসেছিল। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে তাদের নিয়ে আসি। এ সময় একজন শিক্ষার্থী কিছুটা অসুস্থবোধ করেছিল, পরে সে ঠিক হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমার দপ্তরে অভিযোগ দিলেও পরে সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আবেদন করে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অভিযুক্তদের শোকজ করা হয়েছে। আমার দপ্তর থেকেও শোকজ করা হবে।