মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়ির ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী জাহিদ আহমেদ হিরো।
এর আগে ‘রুইনস দ্যাট হুইসপার লাভ অ্যান্ড লিগেসি’ শিরোনামে গত ১৯ জুলাই দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে কাজী নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রমীলা দেবীর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ওই জমিদারবাড়ি রক্ষায় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জাহিদ আহমেদ হিরো ৪ আগস্ট রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
জনশ্রুতি আছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এই জমিদারবাড়িতে বসেই ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল। জমিদারবাড়িটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর স্মৃতিবিজড়িত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের স্থাপন করা তথ্য বোর্ডেও নজরুলের সঙ্গে জমিদারবাড়ির সম্পর্কের বিষয়টি দেখা যায়। ইতিহাসবিদদের মতে, পঞ্চানন সেন নামের একজন জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘি ভবন নামে পরিচিত।
সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঐতিহাসিক ওই জমিদারবাড়ি ও স্থাপনা সংরক্ষণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় রিটটি করেন বলে জানান আবেদনকারী আইনজীবী জাহিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ওই জমিদারবাড়ির স্থাপনা রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, রুলে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হিসেবে ৩০০ বছরের পুরোনো তেওতা জমিদারবাড়ি ১৯৬৮ সালের প্রত্নতত্ত্ব আইনের ১২(গ) ধারা অনুসারে সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংস্কৃতিসচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে হবে।
উল্লেখ, কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর প্রেমের স্মৃতির সাক্ষী তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল প্রমীলা দেবীর বাবার বাড়ি। প্রমীলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষ্পুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে কবির সখ্যতার কারণে কবি তাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত করতে পারতেন। ব্যবসায়ী পঞ্চানন সেন প্রায় সাড়ে সাত একর জায়গার উপর ৫৫ কক্ষবিশিষ্ট এ দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির গোড়াপত্তন করেন। তেওতা জমিদারবাড়ির সামনে ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মন্দিরটি এখনো অক্ষত রয়ে গেছে।
তেওতা জমিদার বাড়ির প্রধান ভবনের উত্তরের ভবনগুলোকে হেমশংকর এস্টেট এবং দক্ষিণের ভবনগুলোকে জয়শংকর এস্টেট নিয়েছিল। প্রতিটি এস্টেটের সামনে নাটমন্দির অবস্থিত, পূর্ব দিকের লালদিঘী বাড়িটি জমিদারদের অন্দর মহল হিসেবে ব্যবহৃত হত। দিঘীতে দুটি শান বাঁধানো ঘাটলা এবং দক্ষিণ পাশে একটি চোরা কুঠুরি বা অন্ধকূপ রয়েছে।উত্তরদিকের ভবনের সামনে ৭৫ ফুট উঁচু ৪তলা নবরত্ন মঠ রয়েছে। নবরত্ন মঠের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার চারদিকে আরও চারটি মঠ আছে।
এফএইচ/কেএইচকে