নদীর মাটি খুঁড়তেই বের হচ্ছে জ্বালানি, অতঃপর...

6 hours ago 8

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ও রাজগাতি ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীতে মাটি খুঁড়লেই বের হয়ে আসছে এক ধরনের কালো মাটি। সেই মাটি রোদে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিখরচায় এমন জ্বালানি সংগ্রহ করা হচ্ছে নদীর তলদেশের মাটি খনন করে। যে কারণে মাটি খোঁড়াখুঁড়ির এক ধরনের প্রতিযোগিতায় মেতেছে মানুষ। 

নদী পাড়ের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ কালো রঙের এ জ্বালানি মাটি সংগ্রহ করছেন। স্থানীয়রা সেই মাটিকে ‘কসম’ নামে ডেকে থাকেন। তবে ওই নামের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে লোকজন তেমন কিছু বলতে পারেননি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহের অধীনে নরসুন্দা নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২৩ কিলোমিটার নদী খননের প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটি ছিল বিগত সরকারের সময়ে। এই প্রকল্প তিন সপ্তাহ আগে ১৩টি খনন যন্ত্র (অ্যাসকেভটর) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলার পূর্ব সীমানা মুশুলি ইউনিয়নের চংভাদেরা গ্রাম থেকে খনন কাজ শুরু হয়ে কালীগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে শুভখিলা রেলসেতু পর্যন্ত খননকাজ চলছে। নদীর তলদেশের উপরিভাগের মাটির স্তর খননের পর কালো মাটি বের হতে শুরু করে। যেগুলো এলাকার মানুষ জ্বালানি হিসেবে সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। 

জ্বালানি মাটি সংগ্রহের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাটি সংগ্রহ করছেন এলাকাবাসী।

রোববার (১৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী খননের কাজ চলছে। খনন যন্ত্রের কাছে নদীপাড়ের অনেক বাসিন্দা কোদাল, শাবল নিয়ে জড়ো হয়েছেন। খনন যন্ত্রের দ্বারা মাটি উঠে আসছে। ওই মাটির সঙ্গে উঠে আসছে কালো রঙের জ্বালানি মাটি লোকজন জ্বালানি সমৃদ্ধ কালোমাটি সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিনা আক্তার বলেন, মুরুব্বিদের মুখে শুনেছেন সুদূর অতীতে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বড় বড় গাছপালা মাটি চাপা পড়েছিল। এসব গাছ পচে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এখন খনন কাজ চালানোর ফলে মাটি মেশানো গাছপালাই হয়ত উঠে আসছে। এ মাটি সংগ্রহের পর তা টুকরো টুকরো করে ১৫ থেকে ২০ দিন রোদে শুকাতে হয়। রোদে শুকানোর পর চুলায় দিলে কয়লার মতো জ্বলে। উত্তাপ হয় বেশি দ্রুত রান্না করা যায়।

আব্দুল হেকিম বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখেছেন শুকনো মওসুম এলে নরসুন্দা নদীর পানি শুকিয়ে চর জেগে ওঠে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা বাড়ি উঠোন ভরাট করার জন্য নদী খোদাই করে মাটি সংগ্রহ করেন। নদী খোদাইয়ে সময় কয়লার মতো কালো মাটি বের হয়ে আসতো। পরে সেই কালো মাটি সংগ্রহের পর রোদে শুকিয়ে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করত নদী পাড়ে মানুষ। বছরের পর বছর জ্বালানি মাটি সংগ্রহের ফলে তা প্রায় শেষ হয়ে আসে। সম্প্রতি নদী খননের কাজ শুরু হলে আবার সে জ্বালানি মাটি বের হয়ে আসছে।

উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইফতেখার মমতাজ খোকন কালবেলাকে জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এই নদীর তীরে কালো মাটি পাওয়া গিয়েছিল। মাঝখানে আর সে মাটি পাওয়া যায়নি। এখন নদী খনন করতে গিয়ে সে মাটির সন্ধান পাওয়া গেছে। কয়েকটি গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের শতশত মানুষের সামনে বিনা মূল্যে জ্বালানি সংগ্রহের একটি সুযোগ এসেছে। শুদ্ধ ভাষায় এ মাটিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হলেও স্থানীয়ভাবে নাম দিয়েছেন কসম।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার কালবেলাকে বলেন, নরসুন্দা নদীর খননের ২৩ কিলোমিটার প্রকল্পের কাজ চলছে। নদীর তলদেশে মাটি খুঁড়লেই বের হয়ে আসছে কালো রংঙের মাটি, সেই মাটি শুকালেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরা যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারব, ততই আমাদের বনাঞ্চল সংরক্ষিত থাকবে। এ ধরনের মাটি পাওয়া খুবই ভালো একটি খবর।

Read Entire Article