নবীজির ইফতার যেমন ছিল

12 hours ago 7

সন্ধ্যায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজাদার ব্যক্তি যে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে রোজা ভাঙেন, সেটাকেই ইফতার বলা হয়। আরবি ইফতার শব্দের অর্থ কোনো কিছু খেয়ে রোজা ভাঙা। এটি আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। ‘ফুতুর’-এর অর্থ নাশতা করা বা হালকা খাবার খাওয়া। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে। তখন ইফতার করার সময় হয়ে যায়। আর সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। রমজান মাসে দিনভর উপোস থেকে ইফতার করাটা মুমিনদের কাছে অনেক আনন্দের। সারা দিনের রোজার ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে মনে অপার্থিব আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে ইফতার। রোজাদার কেমন আনন্দ অনুভব করে তা কেবল যারা রোজা রাখে তারাই অনুধাবন করতে পারেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যে কোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বোখারি: ৭৪৯২)।

রোজা, সেহরি, ইফতার ও রমজান মাসের আনুষঙ্গিক কাজগুলো নবীজি (সা.) কীভাবে করতেন, সেটা বরাবরই মুমিনদের আগ্রহের বিষয়। আর এটা মুমিনের খেয়াল রাখা জরুরি বিষয়ের মধ্যেও পড়ে। কারণ আমল সহিহ হওয়ার জন্য নবীজি (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করা জরুরি। নবীজি (সা.) ইফতার শুরু করতেন সাধারণত খেজুর দিয়ে। সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২)। অন্য হাদিসে আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে; যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (তিরমিজি: ৬৩২)। আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) মাগরিবের নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত, তবে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। (মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬৪)।

অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিস থেকে ও সাহাবিদের আমল থেকে এমনটাই প্রমাণ হয়। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বোখারি: ১৮২১)।

সুতরাং যতটুকু ইফতার করলে তাৎক্ষণিক ক্ষুধা নিবারণ হয়, তা খেয়ে বা কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করে নামাজ পড়ে নেওয়া উত্তম। পরে নামাজ থেকে ফিরে এসে চাহিদামতো আরও খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে।

Read Entire Article