নবীজির জন্মের সময় অলৌকিক ঘটনা

4 hours ago 5
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের সময় পৃথিবীতে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল, যা সবাইকে অবাক করে ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনকে মানুষের সামনে স্পষ্ট করে। এমনই কিছু ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো। নবীজির জন্মের কিছুদিন আগে ইয়েমেনের প্রতাপশালী বাদশাহ আবরাহার হাতি বাহিনীর বিনাশ ঘটে। ‘আসহাবে ফিল’ অর্থাৎ আবরাহার হাতি বাহিনী পবিত্র কাবার ওপর আক্রমণ করতে আসছিল এবং আল্লাহতায়ালা তাদের আবাবিল নামক কিছু ক্ষুদ্র পাখি দ্বারা পরাজিত করেছিলেন। এ ঘটনাটি নবীজির জন্মের বরকতের পটভূমি ছিল বলে সিরাতের কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে। হজরত উসমান ইবনে আবুল আস (রা.)-এর মাতা হজরত ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জন্মগ্রহণ মুহূর্তে আমি মাতা আমিনার কাছে ছিলাম। আমি দেখলাম, বিবি আমিনার ঘরটি আলোয় আলোকিত হয়ে গেল এবং আকাশের তারকারাজি নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ল। আমার মনে হতে লাগল, তারকাগুলো যেন আমার ওপর এসে পড়বে।’ (ফাতহুল বারি: ৬/৭২৬) লক্ষণীয় বিষয় হলো, তারকারাজির নিম্নমুখী হয়ে ঝুঁকে পড়ার দ্বারা এই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে, অচিরেই পৃথিবী থেকে কুফর ও শিরকের অমানিশা দূরীভূত হবে এবং হেদায়েতের উজ্জ্বল আলোতে এ নিখিলধরা আলোকিত হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ পাক তার পবিত্র কালামে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে (হেদায়াত) আলো এবং সুস্পষ্ট কিতাব। যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে আল্লাহতায়ালা তাদের এ হেদায়াতের আলোকবর্তিকা ও কিতাবের সাহায্যে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং তারই অনুমতিক্রমে কুফর শিরকের অন্ধকার হতে তাদের হেদায়াতের পথে নিয়ে আসেন।’ (সুরা মায়েদা: ১৫-১৬)। হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সম্মানিতা মাতা রাসুল (সা.)-এর শুভজন্মক্ষণে এক নুর দেখেন, যার দ্বারা সিরিয়া এলাকার প্রাসাদগুলো উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।’ (মাজমাউ জাওয়ায়েদ: ৮/২২২)। নবীজির জন্মক্ষণে একদিকে পৃথিবীর মূর্তিশালায় নবুওয়াতের সূর্যোদয়, অন্যদিকে পারস্য সম্রাট কিসরার রাজপ্রাসাদে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এ ভূমিকম্পের দরুন রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি গম্বুজ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। পারস্যের এক অগ্নিকুণ্ড, যা এক হাজার বছরব্যাপী বিরতিহীনভাবে জ্বলছিল; তা সেই শুভমুহূর্তে হঠাৎ নিভে যায়। সাওয়াহ নামক এক নদীতে যথারীতি পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন মুহূর্তে হঠাৎ তার অথৈ জলরাশি শুকিয়ে যায় (সিরাতে মুস্তফা: ১/৬৯)। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল অগ্নিপূজাসহ সব ভ্রান্তির অবসানের ইঙ্গিত। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, জন্মের সময় বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মায়ের পেট থেকে এমন একটি নুরের বিচ্ছুরণ ঘটেছিল, যার আলোকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সবকিছু আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) যখন ভূমিতে আবির্ভূত হলেন তখন উভয় হাতের ওপর ভর দিয়ে ছিলেন। অতঃপর এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া) হজরত ইবনে সুফিয়ান বর্ণনা করেছেন, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মগ্রহণের সময় এক ইহুদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে বসবাস করত। যে রাতে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেন, সে রাত-পরবর্তী সকালে সে কুরাইশদের কাছে জিজ্ঞেস করল, গত রাতে এই এলাকায় কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে কি? উপস্থিত কুরাইশের লোকেরা বলল, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। লোকটি বলল, তোমরা এ বিষয়টির অনুসন্ধান করো। কেননা এই রাতে বর্তমান উম্মতের নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। তার কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশেষ নিদর্শন (অর্থাৎ মোহরে নবুওয়াত) রয়েছে। জন্মের পরপর শিশুটির মুখে জিন আঙুল পুরে রাখার দরুন শিশুটি দুই দিন ধরে কারও দুধ পান করবে না। কুরাইশের লোকেরা সন্ধান নিয়ে জানতে পারল, আবদুল মুত্তালিবের প্রিয় পুত্র আবদুল্লাহর এক পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ইহুদিকে এ সংবাদ জানানো হলে সেও শিশুটিকে দেখার আগ্রহ ব্যক্ত করে বলল, চলো! আমিও শিশুটিকে দেখব। ইহুদি লোকটি যখন শিশুটিকে দেখল এবং তার দুই কাঁধের মাঝে মোহরে নবুওয়াতের নিদর্শনও দেখতে পেল, তখন সে চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে গেল। হুঁশ ফিরে আসার পর লোকটি বলল, নবুওয়াত বনি ইসরাইল আজ থেকে শেষ হয়ে গেল। হে কুরাইশ সম্প্রদায়! ভবিষ্যতে এই শিশু তোমাদের প্রতি এমন এক আক্রমণ পরিচালনা করবে যার সংবাদ পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে (ফাতহুল বারি: ৬/৪২৫)। এ ছাড়া আরও অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনাবলি সিরাতের পাতায় পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আসুন আমরা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর এই জন্মের মাসে বেশি বেশি সিরাত পাঠ করি এবং বিশ্বনবীর শানে দরুদ পাঠ করি। লেখক: ইমাম ও খতিব
Read Entire Article