নবীজির (সা.) অন্তর প্রশান্ত হতো যে আমলে

2 hours ago 3

হামদুল্লাহ লাবীব

নামাজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ। দীনের খুঁটি। শ্রেষ্ঠ ইবাদত। বান্দা ও তার রবের মধ্যে সেতুবন্ধন। মুমিনকে কাফির থেকে পৃথকভাবে চেনার উপায়। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা হলো নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দিল, সে কুফুরি কাজ করল। (সুনানে তিরমিজি: ২১১৩) নবীজি (সা.) আরও বলেন, বান্দা আর শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ ছেড়ে দেওয়া। (সহিহ মুসলিম: ১৪৮)

কেয়ামতের দিন নামাজের হিসাবই সবচেয়ে আগে নেওয়া হবে। রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে সবচেয়ে আগে তার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। সেটি যদি যথাযথ পাওয়া যায়, তবে সে সফল হয়ে গেলো এবং মুক্তি পেয়ে গেলো। আর যদি তাতে ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। (সহিহ জামে সগির: ২০২০)

হারাম ও পাপাচার থেকে দূরে থাকার একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। (সুরা আনকাবুত, আয়াত নং : ৪৫) 

এ ছাড়া ছাড়া মানসিক পেরেশানিসহ আত্মীক বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাও রয়েছে নামাজে। নামাজ রোগ নিরাময় করে, হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। দ্বীন সম্পর্কে উদাসীনদের কাছে নামাজ আদায় কঠিন মনে হয়। কিন্তু যারা ধ্যান ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, তারা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ রেখো, কেবল আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রা’দ: ২৮)

নামাজ ছিল নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তাঁর চোখ শীতল হতো নামাজের মাধ্যমে। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নামাজে দেওয়া হয়েছে আমার চোখের শীতলতা। (সহিহ জামে সগির: ৩১২৪)

নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো কঠিন সমস্যার সম্মোখীন হতেন, তখন নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৩১৯)

মাঝে মাঝে নবীজি (সা.) মুআজ্জিন বিলালকে (রা.) বলতেন, হে বিলাল, আজান দাও, আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করব। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৬)

ইবনুল আসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নবীজির (সা.) বক্তব্য ‘আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করব’ -এর ব্যাখ্যা হলো, নামাজে তিনি শান্তি পেতেন। পার্থিব অন্যান্য কাজে তিনি হাঁপিয়ে উঠলে নামাজ আদায়ের মনে প্রশান্তি পেতেন। কারণ নামাজে আছে আল্লাহর সঙ্গে নিভৃত আলাপ। (জামিউল উসুল ফি আহাদিসির রাসুল: ৬/২৬৪)

হাফিজ যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নামাজ হৃদয়ে প্রভূত আনন্দ বয়ে আনে। দুশ্চিন্তা দূর করে। ক্রোধের আগুন নিভিয়ে দেয়। সত্যকে প্রিয় করে তোলে এবং বিনয়ী করে মানুষের প্রতি। মন নরম হয়। ক্ষমা  করে দিতে ভালো লাগে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়। সুতরাং নামাজে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ রয়েছে। এর দ্বারা আল্লাহর কুদরতের কারিশমা দ্রুত প্রকাশ পায়। নামাজ আত্মিক ও শারীরিক রোগ বালাই দূর করে দেয়। (আততিববুন নাবাওয়ি: ২৮৩-২৮৪)

ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হৃদয়কে প্রশান্ত করা, শক্তি যোগানো এবং উৎফুল্ল করে তোলার ক্ষেত্রে নামাজের ভূমিকা অতুলনীয়। নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কলব ও রুহের সংযোগ স্থাপিত হয়। কলব ও রুহ আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পায় এবং তাঁর স্মরণের স্বাদ অনুভব করে। তাকে ডেকে আনন্দিত হয়। তাঁর সামনে দাঁড়ানোর মর্যাদা লাভ করে। সমস্ত শরীর, শক্তি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর ইবাদতে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি অঙ্গ তার প্রাপ্য বুঝে পায়। স্রষ্টার সঙ্গে কথোপকথন হয়। আত্মা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের শক্তি ধাবিত হয় সেগুলোর স্রষ্টা ও রবের দিকে। সর্বোপরি নামাজে আত্মা শত্রুর অনিষ্ট থেকে রেহাই পায়। এটি এমন ঔষধ ও খাবার, যা কেবল সুস্থ হৃদয়ের জন্য উপযোগী। আর রুগ্ন হৃদয় হচ্ছে রুগ্ন শরীরের মতো। উত্তম খাবার সে সহ্য করতে পারে না। (যাদুল মাআদ: ৪/২০৯)

ওএফএফ

Read Entire Article