নামাজের ফরজ মোট ১৩টি; নামাজের বাইরে ৭টি ফরজ, নামাজের ভেতরে ৬টি ফরজ। নামাজের ফরজগুলো ভুল করে বা ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। ওই নামাজ আবার নতুন করে পড়তে হয়। নামাজের কোনো ফরজ ভুল করে বা ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সাহু সিজদা দিলেও ওই নামাজ শুদ্ধ হয় না।
নামাজের বাইরে ৭ ফরজ
১. শরীর পবিত্র হতে হবে
নামাজে পবিত্র অবস্থায় দাঁড়াতে হয়। বাহ্যিক বা হুকমিভাবে শরীর অপবিত্র থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। বাহ্যিক পবিত্রতা মানে শরীরের কোনো জায়গায় নাপাকি লেগে না থাকা। হুকমি পবিত্রতা মানে অজু-গোসল থাকা।
২. পোশাক পবিত্র হতে হবে
নামাজে শরীরের পোশাকও পবিত্র হতে হয়। পোশাকে নাপাকি লেগে থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না।
৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হতে হবে
নামাজের জায়গা অর্থাৎ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন, তা পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র জায়গায় দাঁড়ালে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
৪. সতর ঢাকতে হবে
নামাজে দাঁড়াতে হবে সতর ঢেকে। সতর অনাবৃত রেখে নামাজে দাঁড়ালে নামাজ শুদ্ধ হয় না। পুরুষের সতর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। নারীদের সতর হাতের পাতা, পায়ের পাতা ও চেহারা ছাড়া পুরো শরীর।
৫. কিবলামুখী হতে হবে
নামাজে কেবলামুখী হওয়াও নামাজের অন্যতম ফরজ। কিবলামুখী না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না।
৬. সঠিক ওয়াক্তে নামাজ পড়তে হবে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরজ। কোনো কারণে নির্ধারিত সময় নামাজ আদায় করতে না পারলে পরে কাজা করে নিতে হয়। আর নফল নামাজ নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে দিনের যে কোনো সময় আদায় করা যায়।
৭. নামাজের নিয়ত করতে হবে
নামাজ শুরু করার আগে নামাজের নিয়ত করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের নিয়ত ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে করা জরুরি। যেমন, ফজরের ফরজ নামাজ পড়ছি, জোহরের ফরজ নামাজ পড়ছি এভাবে কোন ফরজ নামাজ সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ত থাকতে হবে।
নামাজের ভেতরে ৬ ফরজ
১. শুরুতে তাকবির দিতে হবে
তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে নামাজ শুরু করা ফরজ। তাকবিরে তাহরিমা না দিলে নামাজ হবে না।
২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হবে
ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরজ যদি কোনো গ্রহণযোগ্য ওজর বা অসুবিধা না থাকে। গ্রহণযোগ্য অসুবিধা থাকলে বসে বা শুয়েও আদায় করা যায়। আর নফল নামাজ ওজর না থাকলেও বসে আদায় করা যায়।
৩. কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে
নামাজের প্রতি রাকাতে কোরআনের অন্তত একটি বড় আয়াত বা তিনটি ছোট আয়াত তিলাওয়াত করা ফরজ। সুরা ফাতেহা তিলাওয়াত করা ও সুরা মেলানো ফরজ নয়, ওয়াজিব।
৪. রুকু করতে হবে
নামাজে প্রতি রাকাতে একটি রুকু করা ফরজ।
৫. সিজদা করতে হবে
নামাজে প্রতি রাকাতে দুটি সিজদা করা ফরজ।
৬. শেষ বৈঠক করতে হবে
নামাজের শেষে তাশাহহুদ পাঠ করা যায় এই পরিমাণ বসা ফরজ। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা ওয়াজিব। চার বা তিন রাকাত নামাজে দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ও তাশাহহুদ পাঠ করা ফরজ নয়, ওয়াজিব।
নামাজের ১৪ ওয়াজিব
১. প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়া।
২. প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা মিলনো (কমপক্ষে তিন আয়াত অথবা তিন আয়াতের সমকক্ষ এক আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা)।
৩. ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারণ করা।
৪. কেরাত, রুকু, সিজদার মধ্যে ক্রমধারা বা তারতিব ঠিক রাখা।
৫. কাওমা করা অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৬. জলসা করা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৭. তা’দিলে আরকান করা অর্থাৎ রুকু, সিজদা, কাওমা, জলসায় কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ স্থির থাকা।
৮. কা’দায়ে উলা অর্থাৎ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাতের পর বৈঠক করা।
৯. প্রথম ও শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া।
১০. ফজর, মাগরিব ও ইশার প্রথম দুই রাকাতে ইমামের জন্য উচ্চৈস্বরে কেরাত পড়া এবং জোহর ও আসরে ইমাম ও একাকি নামাজির অনুচ্চ শব্দে কেরাত পড়া।
১১. সালাম ফেরানো। অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে নামাজ শেষ করা।
১২. বেতরের নামাজের দোয়ায়ে কুনুত পড়ার জন্য অতিরিক্ত তাকবির বলা এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
১৩. দুই ঈদের নামাজে ছয় তাকবির বলা।
১৪. প্রত্যেক রাকাতের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলোর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা।
ওএফএফ

2 hours ago
4









English (US) ·