দলীয় নীতি আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক নায়লা ইসলাম বহিষ্কৃত হয়েছেন। প্রতিবাদে মহিলা নেত্রীর সমর্থকরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে বহিষ্কারের খবর এলাকার অলিগলি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের আড্ডার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ডেমরা (ঢাকা-৫) বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে দলীয় নীতি আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সদস্য পদ এবং সাধারণ সদস্য পদ থেকে নায়লা ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া মহিলা দলের কোনো সদস্য দলীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে বলা হয়েছে ওই নোটিশে।
এ বিষয়ে ডেমরা (ঢাকা-৫) আসনের বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি ডেমরার মীরপাড়া বাজারে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নায়লা ইসলামকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি প্রদান করেন এবং ওই মহিলা একজন দুশ্চরিত্রা বলে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন। এ ছাড়া কলেজের অধ্যক্ষ নূরে আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এর প্রতিবাদে ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম কালবেলাকে বলেন, সালাহউদ্দিন সাহেব বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। ওনার আচরণ থাকতে হবে মার্জিত। তিনি যে মহিলা নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন এতে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। একজন বড় মাপের নেতার কাছ থেকে সাধারণ মানুষ এমন বক্তব্য আশা করেনি। নায়লা শুধু একজন মহিলা দলের নেত্রী না পাশাপাশি তিনি ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক। আমাদের নেতার মুখে এমন মানহানিকর বক্তব্য আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা লজ্জাবোধ করি।
এ বিষয়ে ডেমরা থানা মহিলা দলের সভাপতি মোসাম্মত রীনা আক্তার কালবেলাকে বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নায়লা ম্যাডাম ও আমি একই সাথে সারাক্ষণ দলের সবকটি কর্মসূচি পালন করেছি। এবং বহুবার হাসিনার গুন্ডাপান্ডা এবং তার পুলিশ বাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। এত নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও আমাদের নেতা সালাহউদ্দিন ভাই আমাদের এভাবে প্রকাশ্যে মাইকে হত্যার হুমকি দেয় এবং মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে। এটা অনেক দুঃখজনক ঘটনা। আগে হাসিনার গুন্ডা-পান্ডারা গুম খুনের হুমকি দিত এখন আমাদের নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নেতাকর্মীদের নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো যে হত্যার হুমকি দিলো তার বিচার হলো না যাকে হত্যার হুমকি দিলো দল থেকে বহিষ্কার করল। এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ অবাক হয়েছে। আমরা দলের নেতাকর্মীরা হয়তো মেনে নিয়েছি কিন্তু সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি।
এ বিষয়ে বহিষ্কৃত মহিলা দলের নেত্রী নায়লা ইসলাম কালবেলাকে বলেন, যে অপরাধ করল তার কোনো বিচার হলো না। আর আমি তার বিচার চেয়ে বহিষ্কার হলাম। এটা কেমন নিয়ম। তাহলে কি দলের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা আমরা সাধারণ কর্মীরা নিষ্পেষিত হব। কিছুই কি বলতে পারব না। আগের আওয়ামী লীগ তো আমাদের সঙ্গে এমনই করত।