নিকলীতে ১৪৫ হাঁস খামারে বেকারদের কর্মসংস্থান

3 days ago 8

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় হাওর, নদী, খাল ও ডোবায় হাঁস পালন করে অভাবকে জয় করে ভাগ্য পাল্টাচ্ছেন খামারিরা। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার নারী-পুরুষের। এ খামারিদের সাফল্যে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে গড়ে তুলছেন ছোট-বড় খামার। বৃদ্ধি পাচ্ছে খামার ও খামারির সংখ্যা।

হাঁসের মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অন্যদিকে, প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁসের খামারগুলো।

সাধারণত হাওর, নদী, খাল ও ডোবায় হাঁস পালনে খরচ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজারসহ অন্য উপজেলায় হাঁস ও ডিমের দাম বেশি হওয়ায় খামার ও খামারির সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ বছর ডিমের দাম অন্য বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় হাঁস পালনে খামারিদের আগ্রহও বেড়েছে ব্যাপক হারে। এতে করে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জোয়ানসাই, বোয়ালিয়া, নয়নবালি, শোলাবাড়িয়া, লাউডা, পেরাজুরীসহ ছোট-বড় প্রতিটি হাওর, নদী, খাল ও ডোবার পাশে হাঁসের খামার রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন খালের পাশেও হাঁসের খামার করছেন খামারিরা। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে খালের সংখ্যা।

হাঁসের খামার করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। আর বর্ষাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়।

নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগারছি হাটি গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ছাদু মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এ বছর ৩ হাজারটি ডিম দেওয়া হাঁস পালন করছি। এখন প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার হাঁস ডিম দিচ্ছে। হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে। সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও অনেক টাকা আয় করতে পারছি।

উপজেলার একই গ্রামের মৃত নাসিরুদ্দিনের ছেলে মাহাবুব বলেন, ১৪০০টি ডিম দেওয়া হাঁস কিনেছি। এখন প্রায় অর্ধেকের মতো হাঁস ডিম দিচ্ছে। আগে অন্য পেশায় থেকেও আমার আর্থিক উন্নতি হচ্ছিল না। তাই এ পেশায় এসে আমার আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ভ্যাকসিন, পরামর্শ ও সহযোগিতা তেমন পাচ্ছি না। হাঁসের রোগ হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। পাশাপাশি হাঁস পালনে কোনো পরামর্শও তাদের থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।

উপজেলার পূর্বগ্রামের আলী আকবরের ছেলে এরশাদ আলী বলেন, ১২০০টি হাঁস কিনেছি। ৯০০টি হাঁস ডিমও দিচ্ছে। সামনের মাসে ডিম আরও দেবে। তবে হাওরের কিছু নদী, খাল-ডোবা লিজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে আমাদের হাঁস পালনে ব্যাঘাত ঘটছে। এগুলোর লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত রাখলে হাঁসের খামার আরও বেড়ে যাবে।

নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু হানিফ বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে হাঁসের খামার আছে প্রায় ১৪৫টি। এসব খামারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার হাঁস রয়েছে। বছরে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ ডিম দেয়। আনুমানিক বাজারমূল্য ৩৬ কোটি টাকা। এতে উপজেলার ডিমের চাহিদা পূরণ হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হাওর এলাকায় হাঁসের খামার আশীর্বাদ হতে পারে। হাঁস পালনে খামারিদের সচেতনতা কম। তাদের আমরা সচেতন করতে কাজ করছি। নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের কম মূল্যে ভ্যাকসিন সুবিধা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।

Read Entire Article