‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও অপরাধের বিচার করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আসামিদের ছেড়ে দেননি, তাদের কঠিন বিচার হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনে জড়িতদের বিচার, বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যা ও বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় নিজের দলের লোকদেরও বিচারের মুখোমুখি করেছেন তিনি।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেছেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে দ্বিতীয় দিনের মতো আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলে।
নিজের দলের লোকদের বিচার করার বিষয়টি উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন দাবি করেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে বিচারবিহীন ব্যবস্থা ছিল, দলীয় লোকদের বিচার করতেন না, রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা এসব যুক্তিতর্ক সঠিক নয়।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ব্যাপক মাত্রার (ওয়াইড স্প্রেড) বা পদ্ধতিগত (সিস্টেমেটিক) নিপিড়ণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয় বলেও যুক্তি তুলে ধরেছেন এই আইনজীবী।
আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেন, প্রসিকিউশন থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, এটাও সঠিক নয়। লক্ষ্যভিত্তিক কোনো হত্যাকাণ্ড এখানে হয়নি।
এর আগে, গত ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। ওই দিন হাসিনা-কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও এই মামলার আসামি। এরমধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, বিএম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
শেখ হাসিনার মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থানের শুরুতেই আমির হোসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এটা এমন একটি আইন, যেখানে আসামিকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে সাঁতার কাটতে বলার মতো। এখানে সাক্ষ্য আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হওয়া উচিত ছিল। একই সঙ্গে যখন যেভাবে প্রয়োজন, তখন সেভাবেই এই আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। তাই আইনটি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
এ মামলার আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠনের বিষয়ে প্রসিকিউশনের দেওয়া যুক্তিতর্ক খন্ডন করে আমির হোসেন বলেন, আন্দোলন দমন সরকারের ‘ওয়াইড স্প্রেড’ কিংবা ‘সিস্টেমেটিক’ বলা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। এখানে সরকারের টার্গেট ছিল না। থাকলে শুধু রংপুরে আবু সাঈদ নয়, আন্দোলনের মূখ্য ভূমিকায় থাকা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাহিদ ইসলামসহ অন্যদেরও টার্গেট করে হত্যা করা হতো। ১৫০০ আন্দোলনকারী মারা গেলেও তারা মারা যাননি। ফলে এটা টার্গেট ভিত্তিক ব্যাপক মাত্রায় হত্যাযজ্ঞ ছিল না। প্রসিকিউশনের বক্তব্য সঠিক নয়।
এফএইচ/এমএমকে/এএসএম