নির্বাচনে জোট গঠনের পরিকল্পনা আছে এনসিপির

4 hours ago 3

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি তরুণ রাজনীতিবিদদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া তারা এ সনদে স্বাক্ষর করবে না। বুধবার (২২ অক্টোবর) দলটির আহ্বায়কের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সাক্ষাতে উঠে আসে জুলাই সনদ, বিচার প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়। অভিযোগ দিয়েছেন উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেও।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গতকালের বৈঠক ও সমসাময়িক রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই এনসিপি নেত্রী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।

জুলাই সনদের ব্যাপারে তাদের যতটুকু আগ্রহ তার চেয়ে বেশি আগ্রহ কীভাবে এখানে জামায়াতের সুবিধাজনক পজিশন আদায় করা যায়। বিএনপি ও জামায়াত এই দুটি বড় দলের ক্ষমতাকেন্দ্রিক চাহিদা বেশি

  • জাগো নিউজ: আপনারা বলছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না। আপনাদের দাবি কি পূরণ হবে, নাকি সংশয় আছে?

সামান্তা শারমিন: সংশয় আছে এবং এটা ঐতিহাসিক সংশয়। এর আগেও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে। এজন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি প্রয়োজন। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই পরের সংসদকে সাংবিধানিক ক্ষমতা দিতে হবে। অন্যথায় এটা ১৭তম সংশোধনী হয়ে থাকার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর অ্যামেন্ডমেন্ট (সংশোধন বা পরিবর্তন) যে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে সেটা পরিবর্তন করার সম্ভাবনা থাকে। আমরা এত সংশয় দেখতে চাই না। জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা দিতে হবে, এটা জনগণের সার্বভৌম আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। প্রধান উপদেষ্টাকে এ দায়িত্ব নিতে হবে।

যদি এই আলাপটা ওঠে, যেসব উপদেষ্টা যে দলের সুপারিশপ্রাপ্ত, তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হোক, তাতে এনসিপির কোনো আপত্তি থাকবে না

  • জাগো নিউজ: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্কের হঠাৎ কেন টানাপোড়েন শুরু হলো?

সামান্তা শারমিন: হঠাৎ করে কোনো কিছু হয়নি। জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দেখেনি। একটা দলীয় সংকীর্ণতার জায়গা থেকে দেখেছে। পিআর ইস্যু কেন্দ্র করে দলীয়ভাবে এই পুরো বিষয়টাকে মবিলাইজ করেছে। তাতে উচ্চকক্ষের পিআর, যেটা ঐকমত্যে যেতে পারত সেটি হুমকির মুখে পড়েছে।

এটা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্যে আসতে পারতো যদি না তারা এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত হতো। আমরা এগুলো আগে থেকেই সমালোচনা করছি। প্রথমদিকে নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির কথা কেউই বলেনি। তাদের কারণে পুরো আলোচনাটা সংকীর্ণতার জায়গায় চলে গেছে।

আমরা নতুন দল, নিজস্ব বলয় তৈরির জন্য প্রস্তুত। এমনও হতে পারে এনসিপি নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর অনেকেই আছে যারা দুটি দলীয় বৃত্তের বাইরে নিজেদের দেখতে চান। তাদের নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা ও পরিকল্পনা আমাদের আছে

ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা চলাকালীন তারা সমাবেশ করেছে। এটা ঐকমত্য কমিশনকে প্রভাবিত করার মতো একটি জায়গায় চলে গেছে। জুলাই সনদকে তাদের দলীয়ভাবে ব্যবহার করা, একবার বলে স্বাক্ষর করবো না, আবার স্বাক্ষর করতে যাওয়া—এই বিষয়গুলো প্রমাণ করে দল হিসেবে তাদের অবস্থান ঐকমত্যের প্রতি কনসিসট্যান্ট না।

আরও পড়ুন
দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারী নেত্রীদের টার্গেট করা হয় 
নির্বাচনী নয়, নীতিনির্ভর জোট গঠনের পথে এনসিপি 
নির্বাচন কমিশন এখনই পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে: মনিরা শারমিন 
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব স্পষ্ট হচ্ছে এনসিপির 

জুলাই সনদের ব্যাপারে তাদের যতটুকু আগ্রহ তার চেয়ে বেশি আগ্রহ কীভাবে এখানে জামায়াতের সুবিধাজনক পজিশন আদায় করা যায়। বিএনপি ও জামায়াত এই দুটি বড় দলের ক্ষমতাকেন্দ্রিক চাহিদা বেশি।

  • জাগো নিউজ: এনসিপি নেতারা এর আগে বিএনপির বিপক্ষে কথা বলেছেন। এখন জামায়াতকে নিয়ে কথা বলছেন। রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকতেই পারে, তবে আপনাদের রাজনীতির পথ কি ভিন্ন বা অন্যদিকে ঘুরছে কি না?

সামান্তা শারমিন: আমরা একটি আলাদা রাজনৈতিক দল। আলাদা রাজনৈতিক দলের আলাদা মতাদর্শ থাকবে, রাষ্ট্রকল্প থাকবে এটি স্বাভাবিক। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আমরা ওন করি না।

  • জাগো নিউজ: আপনাদের দলের আহ্বায়ক প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, দুর্নীতি, দলীয় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। আপনারা প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টি কীভাবে উপস্থাপন করেছেন?

সামান্তা শারমিন: দুজন ছাত্র উপদেষ্টা অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে এখনো উপদেষ্টা পরিষদে আছেন। তাদের কেন্দ্র করে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়, তাদের বলা হয় এনসিপির প্রতিনিধি, অথচ এনসিপি তখনও গঠন হয়নি। অন্যদিকে অন্য উপদেষ্টারা চোখের আড়ালে দু-তিনটি দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ মেনটেইন করছে, এ কথাগুলো আলাপ করা হয় না।
আমরা বলেছি, অভ্যুত্থানের পরে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। সেখানে সব রাজনৈতিক দলই তাদের সুপারিশ দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী এই উপদেষ্টাদের নিয়োগ হয়েছে। যদি এই আলাপটা ওঠে, যেসব উপদেষ্টা যে দলের সুপারিশপ্রাপ্ত, তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হোক, তাতে এনসিপির কোনো আপত্তি থাকবে না।

  • জাগো নিউজ: আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য এনসিপি কতটা প্রস্তুত?

সামান্তা শারমিন: নির্বাচনের জন্য দল হিসেবে এনসিপি প্রস্তুত। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে! আমরা নির্বাচন কমিশনের যে ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ ও অবৈধ কার্যক্রম দেখছি…।

আমরা বিচারের কিছু কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু সংস্কার নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংস্কার কমিশনের পুরো রিপোর্ট কাজে লাগানো হয়নি। এগুলো সন্দেহের উদ্রেক করছে যে আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে। নির্বাচন যদি পুরোনো সিস্টেমের আদলে হয় তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

  • জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে এনসিপির নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো জোট গঠনের পরিকল্পনা আছে কি না?

সামান্তা শারমিন: অবশ্যই আছে। আমরা নতুন দল, নিজস্ব বলয় তৈরির জন্য প্রস্তুত। এমনও হতে পারে এনসিপি নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আর অনেকেই আছে যারা দুটি দলীয় বৃত্তের বাইরে নিজেদের দেখতে চান। তাদের নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা ও পরিকল্পনা আমাদের আছে।

এনএস/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস

Read Entire Article