ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আগামীতে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের কোনো বিকল্প নেই। একটি নির্বাচিত সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ঘোষণা করলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বার্তা যায়। এতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আস্থা পান। এক্ষেত্রে একটি পাঁচ বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা (Five-Year Action Plan) দেশে শিল্প-বিনিয়োগ বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকলে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন সরকার কোন কোন খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আগামী পাঁচ বছরে নীতির ক্ষেত্রে কী ধরনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এ জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে-বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা, যাতে একজন বিনিয়োগকারীর কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয়।
সম্প্রতি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আগামী এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সিপিডির ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনের প্রগতিশীল ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী শওকত আজিজ রাসেল ও প্রগতিশীল ব্যবসায়ী পরিষদের সহ-সভাপতি প্রার্থী ও ল্যাবএইড গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ শামীম। তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা হলে ব্যবসায়িক আস্থা কমে যায়। উৎপাদন ব্যাহত হয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে সব মহলের উচিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে একটি সহনশীল ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সব করে যেতে পারবে না। সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা তার সহযোগী ও আমলাতন্ত্র এগিয়ে নিতে পারেনি। ফলে যে আগ্রহ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন, টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আশানুরূপ গতি পায়নি। আগামী দিনের নির্বাচনী ইশতেহারে সেই প্রতিশ্রুতিগুলোকে স্থান দেওয়া প্রয়োজন, যার ধারাবাহিকতা নতুন সরকার রক্ষা করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে ও বাংলাদেশকে মধ্যম মেয়াদি আয়ের জায়গায় নিয়ে যেতে হলে সংস্কারগুলো অপরিহার্য। সংস্কারবিরোধী জোট যেটা সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা ভাঙতে হলে এ ধরনের পদক্ষেপ নির্বাচনী ইশতেহারে অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে এ দেশে কেবল দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। স্কুল-কলেজের কেবল ইমরাত হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশে একটি গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল যা দৃশ্যমান বিভিন্ন প্রকল্প নিতে সাহায্য করেছিল। আমরা চাই, তারা (রাজনীতিবিদরা) জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করবেন। এই জন্য ইশতেহার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই সরকার কিছু কাজ করেছে, কিছু করতে পারেনি। কিম্তু দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। আমরা চাই সংস্কারও অব্যাহত থাকুক। রাজনৈতিক নেতাদের এখন নির্বাচনের ইশতেহার দিতে হবে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ওই ইশতেহার নিয়ে আলোচনার দরকার হলে, তা করা প্রয়োজন।’
শওকত আজিজ রাসেল বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নির্বাচন দিয়ে অর্থনীতি ও উদ্যোক্তাদের মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছে, তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসা পরিবেশ উন্নতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে হয়নি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও শ্রম আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার বেপরোয়া। কিন্তু যে দেশের বিমানবন্দর আগুনে পোড়ে, সেখানে কে বিনিয়োগ করবে? দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।’
অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিল্পে গ্যাস সংযোগ ও রপ্তানিতে ৫০ কোটি ডলারের সম পরিমান অর্থ প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘যদি সময়মতো নীতি সহায়তা না দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতের সুযোগ হারিয়ে যাবে। যদি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ হয়, তাহলে কে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করবে? ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিন, ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। ব্যবসায়ীদের জীবন কঠিন করবেন না।’
ব্যাংকিং খাতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা ব্যাংক লুট করেছে সেই গ্রাহক, ব্যাংকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তাদের মূলধন সহায়তার মাধ্যমে এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। যা লুটেরাদের উৎসাহিত করার শামিল। যেসব ব্যাংকের ৯০ শতাংশের বেশি ঋণখেলাপি তা আবার একীভূত করার কী আছে? দেশকে ঠিক করতে চাইলে নীতি সংস্কার করতে হবে। যে ব্যাংকগুলো টাকা পাচার ও লুটের সঙ্গে জড়িত সেক্ষেত্রে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিয়ে ব্যাংকগুলো বন্ধ করা হোক। এসব ব্যাংকের মালিকানা কখনো নষ্ট হবে না। কোনো না কোনো সময় আবার ফিরে এসে ছোবল মারবে তারা।’
রাসেল বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা অনেকবার সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা ও সঙ্কট সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমদের সময় দেয়নি। দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি মিটিং পেল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যেসব খেলাধুলা হয়েছে, সেটা এখন আবার শুরু হয়েছে। সরকারের সঙ্গে দু-একটি বৈঠক করা হলেও আমাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সেগুলো বস্তাবন্দি করে ড্রয়ারে রেখে দেওয়া হয়েছে।’
প্রগতিশীল ব্যবসায়ী পরিষদের নেতা ও আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহ-সভাপতি প্রার্থী সাকিফ শামীম বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যখন বিরাজ করে, তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ও দ্বিধা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্থিতিশীলতা ও নীতির ধারাবাহিকতা চায়, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। তাই সরকারের দায়িত্ব হলো একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ও আইনগত কাঠামো গড়ে তোলা। যাতে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন।
তিনি জানান, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় এক বাজার বাংলাদেশ। তারপরও দেশে বড় আকারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট না হওয়ার কারণটি প্রধানত অভ্যন্তরীণ। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব অর্থাৎ বছর বছর বিনিয়োগ নীতির পরিবর্তন, বিনিয়োগে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে যেকোনো লাইসেন্সের কোনো কাজ করাতে বছরের পর বছরও সময় লেগে যায়। এ ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। যেমন, হাসপাতাল করতে ২৭/২৮টি লাইসেন্স লাগে, যা সংগ্রহ করতে প্রায় ২-৩ বছর সময় লেগে যায় শুধুমাত্র এই আমলা তান্ত্রিক জটিলতার কারণে। সব ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে একই অবস্থা, অথচ ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
তিনি বলেন, ‘তিন-চার বছর পরে হলেও এলডিসি থেকে বেড়োতেই হবে। এ জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন নতুন পণ্য নিয়ে নতুন বাজারে প্রবেশ করতে হবে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো এখনো কোনো কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। ফলে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণের পরও দেশে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে বিনিয়োগ করছেন না। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সরকার গঠিত হলে রাজনৈতিক স্থিরতা বজায় থাকবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চাইলে যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করতে হবে। তাছাড়া এফডিআই আকর্ষণ করতে সবার আগে প্রয়োজন দেশের ব্র্যান্ডিং। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগবান্ধব সংস্কৃতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য আগে থেকে অনুধাবনযোগ্য একটি স্থিতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দিয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ানোর দায়িত্বে আছে এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। অভিজ্ঞ দক্ষ ব্যক্তিদের বিনিয়োগ বাড়ানোর কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি অনেক নামিদামি বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিতে বিনিয়োগ সামিট করা হয়েছে। এরপরও দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ বাড়েনি। আসলে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ও দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য। যেকোনো বিনিয়োগকারী, দেশি হোক বা বিদেশি আগে নিরাপদ ও পূর্বানুমেয় পরিবেশ খোঁজ করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা হলে ব্যবসায়িক আস্থা কমে যায়, উৎপাদন ব্যাহত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে সব মহলের উচিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে একটি সহনশীল ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প-বিনিয়োগের অনেক বাধা এখনো দূর হয়নি। এসব বাধার মধ্যেও অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনেকে বিনিয়োগ নিবন্ধনও করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় কারখানা খোলা রাখা যায় না, স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারখানায় আয় না থাকলেও শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসসহ সব ধরনের খরচ ঠিকই চালাতে হয়। ফলে বিনিয়োগকারী বিপাকে পড়েন। কে এই লোকসান নিতে চায়? ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কেউ বিনিয়োগে সাড়া দিচ্ছে না। তবে আগামীতে নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাঁচ বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা করে বিনিয়োগ আহ্বান জানালে দেশে শিল্প-বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করছি। আর বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনীতিতে গতি আসবে। রাজস্ব আদায় বাড়বে। বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়বে, ফলে মূল্যস্ফীতি কমবে। সরকারের আয় বাড়বে। নতুন বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে।’
সাকিফ শামীম বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বিনিয়োগের পথে বড় বাধা তৈরি করছে। উচ্চ হারের ব্যাংক সুদ কমিয়ে আনা প্রয়োজন। অনেকে বিনিয়োগ নিবন্ধনও করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) মন্দাভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এফডিআই আসার হার বেড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে মোট ১৫৮ কোটি ডলারের এফডিআই আসে। এর মধ্যে ৭১ কোটি ডলার আবার ফেরত নিয়ে গিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এই সময়ে দেশি-বিদেশি অনেকে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন। অনেকে নতুন বিনিয়োগ করতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক স্থিরতা না থাকায় বিনিয়োগ করেও তা আবার প্রত্যাহার করেছেন। বিনিয়োগ করার জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়নি। পুঁজি ব্যয় করার আগে বিনিয়োগকারী অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন লগ্নি হলে তার কতটা ফেরত আসার সম্ভাবনা আছে। একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলাসহ প্রায় খাতে স্থিতিশীলতা আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তাই নির্বাচিত সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে বেশি মনোযোগী হয়। দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে না এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী হন না। নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া কেউ বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চান না। তাই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অনেকেই প্রত্যাশা করছেন, দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তখন বিনিয়োগে মনোযোগী হবেন উদ্যোক্তারা।’

4 hours ago
7









English (US) ·