নিষেধাজ্ঞা শেষে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না সাগরে, হতাশ জেলেরা

1 month ago 21

টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে কাঙ্খিত ইলিশ মিলছে না বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই-সন্দ্বীপ চ্যানেলে। দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর সাগরে গিয়ে প্রায়ই খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। এতে করে এখানকার ২৯টি জেলেপাড়ার ৩ হাজার জেলে পরিবারে দুর্দিন নেমে এসেছে। স্থানীয় মৎস্য কর্মকতা বলছেন, পরিবেশগত কারণে হয়তো মাছ তার বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদ সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতা অনুসরণ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো অন্য মাছ আহরণেও ছিল এ নিষেধাজ্ঞার আওতায়। ওইদিন রাত ১২টার পর থেকে মাছ ধরতে জেলেরা সাগরে পাড়ি জমালেও কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘাটে ফিরেছেন।

উপজেলার ডোমখালী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে সাগর থেকে একে এক জেলেরা ঘাটে এসেছেন, তবে কারো মুখে হাসি নেই। কারণ ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর বড় আশা নিয়ে সাগরে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফিরেছেন অনেকটা খালি হাতে। জেলেদের চোখে-মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার।

নিষেধাজ্ঞা শেষে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না সাগরে, হতাশ জেলেরা

উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী এলাকার জেলেপাড়ার বাসিন্দা স্বপন জলদাশ বলেন, ৬৫ দিন পর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক আশা নিয়ে সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু যে পরিমাণ মাছ পেয়েছি তাতে মজুরিও উঠবে না। একেতো সাগরে মাছ নেই, অন্যদিকে ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন মাছ না পাওয়ায় কি করে নিজে চলবো, কি করে ঋণ পরিশোধ করবো বুঝছি না।

স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে এ সময় দেশের অন্যান্য জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। অথচ এখানকার চিত্র তার উল্টো। দুই-তিন বছর আগেও বঙ্গেপসাগরের মিরসরাইয়ের সাহেরখালী, ডোমখালী, মঘাদিয়া, বামনসুন্দর, মুহুরী প্রজেক্ট পয়েন্টের ইলিশ দিয়ে পুরো উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাঠানো হতো। এখন মাছ না পেয়ে জেলেরা এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সাগর থেকে ফেরা বলাই জলদাশ ও নিরঞ্জন জলদাশ বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। অন্যান্য জায়গায় জেলেরা এসময়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলেও আমাদের এখানে কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক পাহরায় ছিল। ৬৫ দিন ধরে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। ইলিশের মৌসুমের শুরুতে নৌকা, জাল কেনা এবং মেরামতের জন্য ধার-দেনাসহ অনেক ঋণ হয়ে গেছে আমাদের। নিষেধাজ্ঞার সময়েও এনজিওরা ঋণ মাফ করেনি। আশা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর থেকে ইলিশ ধরে চার-পাঁচ মাসে ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় কীভাবে কি করবো বুঝছি না।

নিষেধাজ্ঞা শেষে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না সাগরে, হতাশ জেলেরা

উপকূলীয় জেলে সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিলাল জলদাশ বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মিতব্য বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য সাগরের পানি দূষিত করে ইলিশের প্রজনন ধ্বংস করে দিচ্ছে। সাগর থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলনও অন্যতম কারণ হতে পারে। এখন ভরা মৌসুম হলেও বঙ্গোপসাগরের মিরসরাই-সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।’

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এখানে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না, যা খুবই দুঃখজনক। মাছ না পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাছ বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। এখানকার বর্তমান পরিবেশ মাছের বিচরণ ক্ষেত্রের ওপর প্রভাব ফেলেছে। মাছ একবার তার বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করলে সেখানে আর ফিরে আসে না। আশা করছি জোয়ার এলে হয়তো জালে মাছ ধরা পড়বে।’

এমএমডি/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article