ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে এমারসন লেও এক উজ্জ্বল নাম। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তি গোলরক্ষক ও পরবর্তী সময়ে খ্যাতনামা কোচ এবার কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন দেশেরই আরেক তারকা নেইমারকে। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেও স্পষ্ট বলেছেন, ‘নেইমার কারও জন্যই উদাহরণ নয়।’
সাম্প্রতিক সময়ে সান্তোসে ফিরে নেইমারের দিন ভালো কাটছে না। চোটের কারণে নিয়মিত বাইরে থাকছেন, খেলার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না আর দলও পড়ে আছে অবনমনের হুমকিতে। সেই পরিস্থিতিতে সাবেক জাতীয় দলের এই কিংবদন্তি বলেন, “সে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিল এক অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে। আমি মনে করি, একবার সান্তোসের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে আমি ওর পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন বলেছিলাম, ‘শোনো ছেলে, আমাদের তোমাকে বিশ্বকাপে দরকার, নিজের যত্ন নিও।’ আর দেখো, সেটাই সে কখনও করে না।”
লেও আরও যোগ করেন, ‘নেইমারের ব্যাপারে আমার বলার মতো খুব বেশি কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি, মাঠের বাইরের মানুষ আর মাঠের ভেতরের মানুষ একে অপরের প্রতিফলন। সে ফুটবল খেলা বন্ধ করেনি, কিন্তু এখন আর আগের মতো উদ্যম বা শক্তি তার মধ্যে নেই। কেন জানো? কারণ সে প্রস্তুত নয়। ফলস্বরূপ বারবার চোট পাচ্ছে এবং পারফর্ম্যান্সে প্রভাব পড়ছে।’
সান্তোসে তিন দফা কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন লেও, যার মধ্যে ২০০১-০২ মৌসুমে তিনি সাও পাওলোকে লিগ শিরোপা এনে দেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বর্তমান প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মানসিকতা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন, ‘আজকের দিনে অনেক খেলোয়াড় তাদের শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু নেইমার যেভাবে নিজের শরীর ও পেশাদারিকে অবহেলা করছে, তা আরও দুঃখজনক। সে একসময় ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা, কিন্তু এখন আর নয়।’
এতেই শেষ নয়, লেওর বিশ্লেষণ আরও কড়া হয় শেষের দিকে— আমি ওকে আর সমাধান হিসেবে দেখি না। ওর সেরা সময় চলে গেছে। এখন ও জানে মাঠে কী করতে হবে, কিন্তু শরীর সাড়া দেয় না। পেশির প্রতিক্রিয়া আর আগের মতো নেই, প্রশিক্ষণেও ধারাবাহিকতা হারিয়েছে। ও আর আগের সেই নেইমার নয়, আজ সে সম্পূর্ণ অকার্যকর।
এমন কঠিন ভাষার মন্তব্যে রীতিমতো তোলপাড় ব্রাজিলিয়ান মিডিয়া। বিশেষত এমন একজন কিংবদন্তির মুখে এই সমালোচনা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যিনি দেশের ফুটবল ইতিহাসে শৃঙ্খলা ও পেশাদারির প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
একসময় ব্রাজিলের ফুটবলের ভবিষ্যৎ বলা হতো নেইমারকে। কিন্তু ক্রমাগত ইনজুরি, অনিয়মিত পারফরম্যান্স আর বিতর্কিত জীবনযাপন আজ যেন তার আলোকে নিভিয়ে দিচ্ছে। এমারসন লেওর মতো কিংবদন্তির হতাশা হয়তো কেবল একজন খেলোয়াড়কে নয়, পুরো ব্রাজিলীয় ফুটবল সংস্কৃতিকেই এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে—নেইমার কি সত্যিই হারিয়ে ফেলেছেন সেই ছেলেটিকে, যে একসময় সেলেসাওয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে জন্ম নিয়েছিল?