নেপালের প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ঘোষণাকে অসাংবিধানিক বলে পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রথম সারির আটটি রাজনৈতিক দল। তাদের দাবি, নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমেই পার্লামেন্ট বিলুপ্তি করতে হবে। খবর বিবিসি
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায়—নেপাল কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওয়িস্ট সেন্টারসহ মোট আটটি দল। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাদেল।
গত ৪ সেপ্টেম্বর নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগ তুলে ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি মর্শা অলি। এর পরই দেশব্যাপী বিক্ষোভে নামেন তরুণরা। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের ফলে তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, এতে প্রথম দিনই ১৯ জন নিহত এবং আহত হন শতাধিক মানুষ। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে।
অবস্থার বেগতিক দেখে ৮ সেপ্টেম্বর রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সরকার; কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। পরদিন মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ আরও সহিংস রূপ নিলে প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করেন। তিনি সিপিএন-ইউএমএলের প্রধান। পদত্যাগের পর থেকে তিনি কোথায় আছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তার পদত্যাগের তিন দিন পর গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র সুশীলাকে শপথ পাঠ করান। তিনি ছয় মাস দায়িত্ব পালন করবেন।
শপথ অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের ৫ মার্চ পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন তিনি।
নেপালের আট দলের দাবি, প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করা অসাংবিধানিক এবং এটি নেপালের বিচার বিভাগের পূর্ববর্তী নজিরগুলোরও বিরোধী।
নেপালে গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ এবং এমপি-মন্ত্রীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সহিসংতার কারণে দেশটিতে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার। দুই হাজারের বেশি কয়েদি কারাগার থেকে পালিয়েছে। তাদের অনেককে আবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অনেক অস্ত্র লুট হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে গত বুধবার থেকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। জারি করা হয়েছিল কারফিউ। শুক্রবার থেকে দেশটিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কাঠমান্ডুতে দোকানপাট খুলেছে। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা নেপালে সহজে শান্তি ফিরবে কি না, তা বলা কঠিন।