পেশাগত জীবনে পদোন্নতি একটি কাঙ্ক্ষিত অর্জন। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর একজন কর্মী যখন পদোন্নতি পান, তখন সেটিকে সাফল্যের চূড়ান্ত স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই এই সাফল্য এক ধরনের শাস্তির মতো অনুভব হয়। যে পদোন্নতি গর্বের হওয়া উচিত, তা অনেকের কাছে হয়ে ওঠে ক্লান্তি, বিচ্ছিন্নতা, এমনকি অনুতাপের কারণ।
মূলত প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন ও ব্যক্তিগত পছন্দ যখন একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পড়ে তখন পদোন্নতি এক ধরণের শাস্তি হিসেবেই অনুভূত হয়।
একজন অসাধারণ প্রকৌশলীকে যখন ম্যানেজার বানানো হয়, তখন তার কাজের ধরন বদলে যায়—সে তখন বাজেট, রিপোর্ট, আর পারফরম্যান্স রিভিউ নিয়ে ব্যস্ত। এক জন ডিজাইনারকে যখন পরিচালক বানানো হয়, তখন তার ভূমিকা সৃষ্টিশীল কাজ থেকে সরিয়ে তাকে ক্লায়েন্ট সামলানোয় কেন্দ্রীভূত করে। কোম্পানির কাছে এগুলো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, কিন্তু ব্যক্তির কাছে তা নিজের প্রিয় কাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা।
এই ধরণের পরিবর্তনে একজন কর্মী হয়তো বেশি বেতন পান, কিন্তু হারান কাজের অন্তর্নিহিত অর্থ। তাদের আগের সফলতা যেই কাজে ছিল, সেই কাজ থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়—বাইরে থেকে সাফল্য, ভিতরে থেকে শূন্যতা।
অনেকের জন্য পদোন্নতির সবচেয়ে বড় চাপ আসে নতুন প্রত্যাশা ও নেতৃত্বের দায় থেকে। আগের মতো নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ আর থাকে না। এখন তাকে অন্যদের কাজের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বিচার করা হয়। কেউ কেউ এ দায়িত্বকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন, আবার অনেকে এটিকে বোঝা হিসেবে দেখেন—বিশেষ করে যদি তারা নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত না হন বা নেতৃত্ব দেওয়ার আগ্রহ না থাকে।
তাছাড়া পদোন্নতির পর অনেক সময় সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কও বদলে যায়। কথোপকথনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায়। বিশ্বাস তৈরি করা কঠিন হয়। কাজের চাপের পাশাপাশি এটি একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি বাড়ায়।
পদোন্নতির সঙ্গে বাড়তি বেতন এলেও, সেই অর্থ মানসিক ও শারীরিক চাপের বিনিময়ে যথেষ্ট বলে মনে না-ও হতে পারে। কাজের ভারসাম্য হারিয়ে গেলে, উচ্চ বেতনও আনন্দ দিতে পারে না।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো—সম্মান বা স্বীকৃতি সবসময় আসে না। অনেকে ভাবতে পারেন নতুন পদে থাকা ব্যক্তিটি যোগ্য না বা বন্ধু ছিল, এখন বস—ফলে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়।
তাহলে সমাধান কী?
পদোন্নতি যেন শাস্তির মতো না লাগে, তার জন্য প্রতিষ্ঠানের উচিত কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া:
১. ধারণা যাচাই করা
কেউ বর্তমান কাজে দুর্দান্ত বলেই তাকে পদোন্নতি দেওয়া উচিত—এই চিন্তাটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাকে জিজ্ঞাসা করা দরকার, সে আসলে কীভাবে উন্নতি করতে চায়।
২. প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া
নেতৃত্ব, দ্বন্দ্ব নিরসন, দল পরিচালনা—এসব নতুন দক্ষতা। পদোন্নতির সঙ্গে প্রশিক্ষণ যুক্ত না থাকলে তা কর্মীর জন্য শাস্তির মতো হয়ে উঠতে পারে।
৩. অর্থপূর্ণ কাজের সংযোগ বজায় রাখা
যদি নতুন পদে কারো আগের প্রিয় কাজ থেকে দূরে থাকতে হয়, তবে তার কিছু অংশ এখনও করতে দেওয়ার উপায় খুঁজতে হবে। এতে তারা দায়িত্ব নিলেও মানসিকভাবে সংযুক্ত থাকবেন।
সূত্র: ফোর্বস
এমএসএম