পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনেপাতা বেচাকেনা

6 hours ago 6

পাবনার ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনেপাতা বেচাকেনা হচ্ছে। এই এলাকার ধনেপাতার মান ও ঘ্রাণ ভালো হওয়ায় এটি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে। চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ১১০০-১৪০০ মণ ধনেপাতা বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্য ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে ৭০ হেক্টর জমিতে এবার ধনেপাতার আবাদ হয়েছে। এটি মূলত শীত মৌসুমের ফসল হলেও এখানকার কৃষকরা পদ্মার চরে আগাম ধনেপাতার আবাদ করেছেন।

উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী প্রত্যন্ত চরাঞ্চল দাদাপুর, চররূপপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, বিলকেদার চরাঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চরের জমিতে ব্যাপক ধনিয়ার পাতার জমিতে আবাদ হয়েছে। চাষিরা জমি থেকে ধনেপাতা তোলা আবার কেউ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ততা চোখে পড়ে ধনেপাতা ব্যবসায়ীদের। তারা ধনেপাতা জমি তোলার পর প্যাকেটজাত করণের জন্য ধোয়া, ঝুড়িতে সাজানোর সময় পানির স্তরে স্তরে বরফ দেয়া ও ট্রাকে লোড করার কাজ করছেন।

পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনেপাতা বেচাকেনা

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধনিয়া মূলত মসলা জাতীয় ফসল হলেও সবজি হিসেবে এর সবুজ পাতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রকমারি তরকারিতে ধনেপাতা অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করতে সার, সেচ, কীটনাশক ও বাজারজাতকরণসহ খরচ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমির ধনেপাতা ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলার বিলকেদার চরে ধনেপাতা প্যাকেটজাতকরণের সময় কথা হয় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরের ধনেপাতা আমরা এখানকার কৃষকদের কাছে থেকে বিঘা হিসেবে কিনেছি। প্রতি বিঘা ধনেপাতার জমি ফলনের মান হিসেবে ৬০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছি। ধনেপাতা জমি থেকে তোলার পর মহিষের গাড়িতে করে পদ্মার শাখা নদীর কাছে এনেছি। সেখান থেকে নৌকাতে নদী পাড়ি দেওয়ার পর ভটভটি করে প্যাকেজিং করার স্থানে এনেছি। এখানে প্যাকেটজাত করার পর ভটভটি করে এখান থেকে দুই দূরে কিলোমিটার দূরে দাদাপুর স্কুলের সামনে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। এখানকার ধনেপাতা ঢাকার কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লার নিমশা, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনেপাতা বেচাকেনা

চুয়াডাঙ্গার আরেক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের জেলা চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ব্যাপক ধনেপাতার আবাদ হয়। এবার অতিবৃষ্টির কারণে এসব জেলার ধনিয়ার পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। ঈশ্বরদীর চররূপপুর, দাদাপুরসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক ধনিয়ার ফলন হয়েছে। তাই আমরা এবার এখান থেকে ধনেপাতা কৃষকদের কাছে থেকে বিঘা প্রতি কিনে তা প্যাকেটজাত করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে পাঠাচ্ছি।

উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, পদ্মার চরজুড়ে এবার ব্যাপক ধনেপাতার আবাদ হচ্ছে। হঠাৎ বন্যায় বেশকিছু জমির ধনিয়ার জমির ক্ষতি হয়েছে। তবুও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা বিঘাপ্রতি ৮০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে জমি থেকে ধনেপাতা সংগ্রহ করে তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বাজারজাতকরণের জন্য পাঠাচ্ছে। এখানকার ধনেপাতার গুণগত মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বেচাকেনা হচ্ছে।

পদ্মার চরে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার ধনেপাতা বেচাকেনা

আরেক কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, পদ্মার চরাঞ্চল দাদাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, বিলকেদার, কামালপুর চর থেকে প্রতিদিন ১০০০-১৪০০ মণ ধনিয়ার পাতা বিক্রি হচ্ছে। যার বাজার মূল্য ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে জানান, ঈশ্বরদীর পদ্মার চরে এ বছর ৭০ হেক্টর জমিতে ধনেপাতার আবাদ হয়েছে। এই ধনেপাতা স্থানীয়দের চাহিদা পূরণের পর রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ধনেপাতার জমি কৃষকরা প্রতি বিঘা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিঘায় বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

এমএন/এএসএম

Read Entire Article