বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, শ্যালককে নিয়ে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ কারসাজি চক্র গড়ে তুলেছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের। যিনি শেয়ারবাজারে হিরু নামে পরিচিত। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। কারসাজির প্রমাণ মেলায় হিরু ও পরিবারের সদস্যদের শত কোটি টাকার ওপরে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৃহস্পতিবার (বিএসইসি) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারসাজির মুলহোতা হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও মোনার্ক হোল্ডিংকে মোট ১৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় তাদের এ জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি থেকে জনানো হয়েছে, ফরচুন সুজ’র শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ১১ কোটি টাকা জরিমান করা হয়েছে। হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১৫ কোটি টাকা, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি টাকা, বোন কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি টাকা এবং ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সাজিদ মাতবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, মোহাম্মদ বাসারকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৮৪ লাখ টাকা এবং আবুল কালাম মাতবরকে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ টাকা, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ টাকা, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ টাকা, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ টাকা, মোনার্ক হোল্ডিংকে ১ লাখ টাকা এবং সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আর সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মতবরকে ১ লাখ টাকা, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ টাকা, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ টাকা, কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা এবং কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ জরিমানা করা হয়েছে।
পরিবার নিয়ে হিরুর শেয়ারবাজারে ভয়াবহ করসাজির চিত্র তুলে ধরে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে হিরু তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর মালিকানধীন প্রতিষ্ঠানের কারসাজির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
জরিমানার কবলে আরও যারা
এদিকে বিএসইসির কমিশন সভায় আনোয়ার সিকিউরিজিটকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি (যা পরবর্তীতে পূরণ হয়েছে) রাখার দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা করা হয়েছে।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় সোনালী পেপারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালক ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২০ লাখ টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার অর্থ ব্যক্তিগত দায় হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কারসাজি করায় মাহফুজা আক্তারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই মিউচুয়াল ফান্ডটি নিয়ে কারসাজি করায় দেওয়ান সালেহিন মাহমুদকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি প্রমাণ পেয়েছে, মূল ব্যবসার বাহিরে বিনিয়োগ করেছে মোনার্ক হোল্ডিং। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মোনার্ক মার্ট এবং সফটাভিন লিমিটেড-এ বিনিয়োগ করা অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংয়ের হিসাবে ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ অর্থ ফেরত আনতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এমএএস/এমএইচআর/জিকেএস