খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
গাছ পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অপরিহার্য উপাদান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গাছ অনস্বীকার্য। বৃক্ষরাজি মানবকুলের পরম সাথী। একে অপরের পরিপূরক। গাছ হচ্ছে বায়ুফিল্টার, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি শব্দদূষণও কমায়। গাছ অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশ নির্মল রাখে।
সবুজ বৃক্ষ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। পাখ-পাখালি ও কীটপতঙ্গসহ জীবের আশ্রয়স্থল হিসেবে গাছ ভরসার জায়গা। ধরায় বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ শীতল ও বাসোপযোগী রাখতে গাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গাছপালা পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমায়। প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখতে গাছের সমারোহ প্রয়োজন। উদ্ভিদ আছে বলেই পৃথিবী আজও বসবাসের যোগ্য।
গাছ আমাদের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত সবুজ ধ্বংস করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছি। দিনের পর দিন গাছ কেটে বন উজাড় করছি। ফসলি জমি কিংবা অবকাঠামো নির্মাণের অজুহাতে আমরা গাছ কেটে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন করছি। গাছে পেরেক লাগানো বা ছিদ্র করে গাছকে অত্যাচার করছি। গাছেরও প্রাণ আছে ভুলে গেলে চলবে না।
গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। শহর অঞ্চলে গাছের আনাগোনা বাড়ানো গেলে নগরের তাপমাত্রা কমে যাবে। সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত হবে। একটি সবজি গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে তা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত। যথেষ্ট বনভূমি না থাকায় প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে।
আরও পড়ুন
মরুকরণের সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় সেচ কাজ ও খাবার পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। ওজন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। অ্যাসিড বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে প্রতিনিয়ত সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সবুজের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে আবহাওয়ার আচরণও বদলেছে। গরমের সময় যেমন অতিরিক্ত গরম; শীতকালেও কখনো কখনো অতিরিক্ত ঠান্ডা। আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় কৃষিকাজ চ্যালেঞ্জিং হয়েছে। পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। জগতে সবুজের সমারোহ ঘটাতে হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বৃক্ষ মেলার পাশাপাশি বৃক্ষরোপণেও উৎসব হতে পারে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ উৎসবের আয়োজনে ভূমিকা রাখতে পারে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। সরকারি ও বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগতভাবে সবার উচিত বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসা। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে গাছের বিকল্প নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।
এসইউ/এমএস