নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একটি বড় আইনগত সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ২০০৬ সালে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
আদালত আগামী ১০ জানুয়ারি এ মামলায় ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা করবেন। তবে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) এক বিচারক জানিয়েছেন, তাকে কারাগারে পাঠানোর সম্ভাবনা কম এবং তিনি ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দেওয়ার কথা ভাবছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ খবর জানা যায়।
এদিকে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে নেভাডা অঙ্গরাজ্যে এক হোটেলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়েছিল। এ ঘটনা যাতে জনসমক্ষে না আসে তার জন্য ২০১৬ সালে ট্রাম্প তার আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেন।
ট্রাম্প তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সে সময়কার এই অর্থ পরিশোধের তথ্য তিনি তার ব্যবসায়িক নথিতে গোপন করেছিলেন।
এই ঘুষ প্রদান ও তথ্য গোপনের ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। ২০২২ সালের মে মাসে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যদিও ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতের বিচারক হুয়ান মেরকান জানিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১০ দিন আগে ট্রাম্পকে আদালতে হাজির হতে হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা, কারণ আগে কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট অভিষেকের কিছুদিন আগে আদালতে হাজির হননি বা ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হননি।
বিচারক মেরকান তার আদেশে বলেছেন, ট্রাম্পকে জেলে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। তার পরিবর্তে, ট্রাম্পকে ‘নিঃশর্ত মুক্তি’ দেওয়া হবে, অর্থাৎ তাকে কোনো ধরনের কারাবাস, জরিমানা বা নজরদারি পালন করতে হবে না। তবে, ট্রাম্প যদি আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারেন, তাহলে তাকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
এই মামলায় ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন শেউং বলেছেন, এই মামলা বেআইনি এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, সংবিধান অনুযায়ী এই মামলা অবিলম্বে খারিজ হওয়া উচিত।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা ও আইনজীবীসহ তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগও রয়েছে। বিচারক মেরকান জানান, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচারক, জুরি এবং আইনকে অসম্মান করে প্রচারণা চালিয়েছেন, যার ফলে ১০টি অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাম্পের এসব কার্যকলাপ বিচার ব্যবস্থার উপর ‘নিরন্তর ও ভিত্তিহীন আক্রমণ’ হিসেবে দেখা হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর থেকে আরও কয়েকটি মামলা চলছে। তবে এই মামলাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ট্রাম্পই হচ্ছেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো। ১০ জানুয়ারির রায় ঘোষণার পর ট্রাম্পের জন্য আপিল করার সুযোগ থাকবে।
বিচারক মেরকান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, যদি ট্রাম্প আপিল করতে চান, তবে তাকে সে সুযোগ দেওয়া হবে। এই আপিল প্রক্রিয়া পুরোপুরি না হলে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ট্রাম্পের শাসন পরিচালনায় এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।