পাল্টেছে ইলিশের মৌসুম, দাবি জেলেদের

20 hours ago 4

আগস্ট মাস থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও জেলেদের জালে দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। বিগত বছরগুলোতে আগস্ট মাস থেকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ ধরা পরলেও গত ২-৩ বছর ধরে তা আস্তে আস্তে কমে গেছে। আর এ বছর সেপ্টেম্বরেও দেখা নেই ইলিশের।

জেলেদের দাবি, ইলিশের ভরা মৌসুম পাল্টে গেছে। তাই এ বছর মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সঠিক সময় নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন এলাকার জেলে পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দল বেঁধে মাছ শিকারের নেমেছেন জেলেরা। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। তাই নিরাস হয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। দল বেঁধে নদীতে গিয়ে কেউ পাচ্ছেন ২-৩ হালি জাটকা, কেউ পাচ্ছেন ৪-৫টি ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ। এতে তেলের দোকানের টাকা ও চায়ের দোকানের টাকা পরিশোধ করে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ পাচ্ছেন জেলেরা।

পাল্টেছে ইলিশের মৌসুম, দাবি জেলেদের

ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল এলাকার জেলে মো. লোকমান মাঝি ও মনির মাঝি বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৭ জন মাঝি ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়েছি। দুপুর ২টার দিকে তীরে ফিরে এলাম। মাত্র ৩ হালি জাটকা পেয়েছি। ভোলার খাল ঘাটে সেগুলো বিক্রি করে ১ হাজার ৩০০ টাকা পেয়েছি। পরে ট্রলারের তেলের খরচ ও চায়ের দোকানের টাকা দিয়ে প্রতিজন মাঝি ৫০ টাকা করে পেয়েছি।

একই উপজেলার পশ্চিম ইলিশা এলাকার জেলে মো. করিম মাঝি ও মো. কামাল মাঝি জানান, ৪-৫ বছর আগেও আগস্ট মাসে দৈনিক ২০-৩০ হাজার টাকার ইলিশ পেতেন। যারা ছোট ট্রলার বা নৌকা নিয়ে যেতো তারাও ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার ইলিশ পেতেন। কিন্তু ২-৩ বছর ধরে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে নদীতে গিয়ে ইলিশ পাচ্ছেন না। এখন ইলিশ পাওয়া যায় অক্টোবর মাসের শুরু থেকে।

জেলেদের মতে, ইলিশের ভরা মৌসুম পাল্টে অক্টোবর মাসে চলে গেছে। এজন্য আগস্ট মাসের ইলিশ পাচ্ছেন না তারা। কিন্তু কী কারণে মৌসুম পাল্টে যাচ্ছে তা জানা নেই জেলেদের।

কাচিয়া মাঝের চর এলাকার জেলে মো. মনজু মাঝি ও মো. শরীফ মাঝি জানান, গত বছর মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা সঠিক সময়ে নির্ধারণ করা হয়নি। যার কারণে আমরা নিষেধাজ্ঞার শেষে নদীতে গিয়ে প্রচুর ডিমওয়ালা মা ইলিশ পেয়েছি।

পাল্টেছে ইলিশের মৌসুম, দাবি জেলেদের

তাদের মতে, গত বছর বেশিরভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। যার কারণে এ বছর নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য তারা এ বছর সরকারের কাছে ইলিশের নিষেধাজ্ঞা অক্টোবর মাসের শেষের দিকে অথবা নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে দেওয়ার দাবি করেন।

জেলে আব্দুল হাকিম মাঝি ও ইব্রাহীম মাঝি জানান, প্রতি বছরই আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এখনতো পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তন হয়নি। গত ২-৩ বছর ধরে আমরা জেলেরা মৎস্য বিভাগের কাছে মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সঠিক সময় নির্ধারণের দাবি করে এলেও কোনো লাভ হয়নি।

তাদের দাবি, ইলিশ ঠিকমতো ডিম ছাড়তে না পারায় নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দিতে। এতে জেলেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেইসঙ্গে সরকারও রাজস্ব হারাবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক জ্যৈষ্ঠ মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক মো. ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেব বিবেচিত হয়। কিন্তু বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের ভরা মৌসুমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছ। ইলিশের ডিম ছাড়া ও ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি বিশেষ করে আগে ও পরে বৃষ্টি হওয়ায় এই পরিবর্তনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, ইলিশের ভরা মৌসুম আগস্ট মাস থেকেই শুরু হয়। অক্টোবর মাসের ভরা পূর্ণিমা থেকে মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু গত ২-৩ বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা শেষেও ইলিশের পেটে প্রচুর ডিম পাওয়ার দাবি করছেন জেলেরা। এজন্য জেলেরা নিষেধাজ্ঞা পিছেয়ে দেওয়ার দাবিও করেন। তবে এ বছর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়, জেলেদের দাবি ও মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করা তথ্যের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাবো।

তিনি আরও জানান, ভোলার সাত উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ১২০ জন। এ বছর ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article