পাশাপাশি কবরে চিরনিদ্রায় ৪ বোন

8 hours ago 7

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মল্লিকপাড়া মাঠে রোববার রাতটা ছিল খুবই কষ্টের। নিঃস্তব্ধ রাত, কাঁদছে গ্রাম, কাঁদছে মানুষ। সামনে পাশাপাশি রাখা চারটি খাটিয়া, সাদা কাফনে মোড়া চারটি নিথর দেহ চারটি শিশুর। তারা চার বোন। তাদের জানাজা শেষ হয় একসাথে। এরপর রাজনগর কবরস্থানে পাশাপাশি শায়িত করা হয় তাদের।

রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল তারা, শাপলা তুলবে বলে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা, ঘরে ফেরেনি কেউ। উদ্বিগ্ন পরিবার ছুটে যায় মসুরিভাজা বিলে। কিছু সময় পরেই বিলের জলে একে একে ভেসে ওঠে চার শিশুর দেহ।

নিহতরা হলো অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা ও মিম এবং চতুর্থ শ্রেণির আফিয়া ও আলসিয়া। সবাই একই পরিবারের, একই গ্রামের।

রাতের সেই জানাজায় অংশ নেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদ অরুণ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান এবং জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজউদ্দীন খান। ইমামতি করেন তাজউদ্দীন খান।

গ্রামের প্রবীণ আয়ুব আলী বললেন, 'এই বয়সে এসে একসাথে চারটা কবর খুঁড়তে হবে ভাবিনি। এমন মৃত্যু দেখেনি আমাদের গ্রাম।'

বাবা আব্দুস সামাদ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার দুই মেয়ে একসাথে চলে গেল, আল্লাহ যেন তাদের জান্নাত দান করেন।' পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মিমের বাবা ইসহাক আলী শুধু কাঁদছিলেন।

মোমিনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আফিয়া ও মিম তার বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। দুজনেই অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী, আর নিয়মিত নামাজ পড়ত। এমন শিক্ষার্থী হারানো সত্যিই কষ্টের। 

স্থানীয় দুই যুবক বলেন, 'আমরা ভ্যানযোগে যাচ্ছিলাম। দূর থেকে দেখি মেয়েগুলো পানিতে নেমেছে, ভেবেছিলাম খেলছে। কিছু সময় পর শুনি তারা আর নেই। জানলে দৌড়ে যেতাম।'

রাজনগর গ্রামের ইতিহাসে একসাথে চারটি কবর, এ যেন বর্তমানে এক অবিশ্বাস্য বাস্তবতা। বিলের পানি এখনো স্থির। হালকা বাতাসে কাঁপছে শাপলার পাতা। চারটি নাম ভাসছে নিঃশব্দে ফাতেমা, মিম, আফিয়া আর আলসিয়া। রাজনগরের মাটিতে পাশাপাশি ঘুমিয়ে তারা চিরনিদ্রায়, রেখে গেছে এক গভীর শূন্যতা।

Read Entire Article