সকাল দেখেই নাকি বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে। সবসময় এ প্রবচনের সত্যতা না মিললেও অনেক ক্ষেত্রেই তা সত্য হয়। যেমন হলো আজ ২৩ অক্টোবর শেরে বাংলায় বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে।
আজ বৃহস্পতিবার শেরে বাংলায় সিরিজের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল চমক জাগানো। ক্যারিবীয় বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের করা দিনের প্রথম ওভারেই দুই বাউন্ডারি হাঁকালেন বাংলাদেশ ওপেনার সাইফ হাসান। দিনের তৃতীয় ডেলিভারিটিই সোজা আকিলের মাথার ওপর দিয়ে তুলে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে রান খাতা খুললেন সাইফ। ঠিক পরের বলটি প্যাডেল স্কুপ করে ফাইন লেগ দিয়ে আবার চার সাইফের।
সেই শুরু। তারপর ২৬ নম্বর ওভারের দ্বিতীয় বলটি পর্যন্ত শেরে বাংলায় বয়ে গেল সৌম্য আর সাইফ ঝড়। খেলা না দেখা যে কারও হয়তো বিশ্বাস হবে না। কারণ, ঝড় তোলা বহুদূরে, প্রথম ২ খেলায় সাইফ ডাবল ফিগারেই (৩ ও ৬) যেতে পারেননি। সৌম্য প্রথম দিন ৪ রানে ফিরলেও পরের খেলায় করেছিলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ৮৯ বলে ৪৫।
আজ তৃতীয় ও শেষ খেলায় তারাই ঝড় তুললেন। শেরে বাংলায় চার ও ছক্কার ফুলঝুরি ছোটালেন অবলীলায়। আসল কথা হলো, সৌম্য আর সাইফ অনেক বেশি ভালো খেলেছেন। সাহস, আত্মবিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে স্বচ্ছন্দে উইকেটের সামনে, পেছনে ও দু’দিকে অনেক ‘বিগ হিট’ নিয়েছেন।
দুজনে মিলে ছক্কাই হাঁকিয়েছেন ১০টি। সাইফ ও সৌম্যের ব্যাট থেকে বাউন্ডারি এসেছে এক ডজন।
ভাবছেন, শেরে বাংলার কালো রঙের স্লথ গতির, নিচু বাউন্সি আর টার্নিং পিচ কি রাতারাতি খুব ভালো হয়ে গেল? ‘টিপিক্যাল’ শেরে বাংলা পিচ স্পিনারদের হাত থেকে কি ব্যাটিং-ফ্রেন্ডলি হয়ে গেল? তা হয়তো হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার বল ব্যাটে এসেছে। স্লথ ছিল না। থেমেও আসেনি। তেমন স্পিনও করেনি।
এমন উইকেটে যতটা ভালো খেলা সম্ভব, সৌম্য আর সাইফ ঠিক তাই খেলেছেন। তারা দুজনই উইকেটের সামনে, পেছনে ও দু’দিকে বেশ অনেকগুলো বড় শট খেলেছেন। সাইফ হাসান বেশ ক’বার সোজা ব্যাটে এক-দুই পা বেড়িয়ে এসে সোজা ব্যাটে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বাঁহাতি সৌম্য একজোড়া ছক্কা হাঁকিয়েছেন সুইচ হিটে পয়েন্টের ওপর দিয়ে।
আগেই জানা, তারা দুজন আজ দু’টি নতুন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। প্রথম হলো, শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী জুটির ১০০+ রান ছিল না। সেটা আজ করে দেখিয়েছেন সৌম্য আর সাইফ। দুজনের স্ট্রাইকরেটও ছিল বেশ ভালো। সৌম্য ব্যাট করেছেন ১১১.১১ স্ট্রাইকরেটে। সাইফ খেলেছেন ১০৫.৮১ স্ট্রাইকরেটে।
আজকে সেই দুই রেকর্ড ভাঙাই শুধু নয়, দুজনের সামনেই সুযোগ ছিল সেঞ্চুরি করার। কিন্তু কেউ পারেননি তিন অঙ্কে পা রাখতে। সৌম্য ৯১ রানে সীমানার কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। আর সাইফ আউট হন ৮১ রানে।
কিন্তু একটা বিষয়ে দুজনেরই মিল ছিল। তা হলো, উভয়েই ইনিংসের প্রায় অর্ধেক বলে রান করতে পারেননি। ৭২ বল খেলা সাইফের ডট ৪৪টি। আর ৮৬ বল মোকাবিলা করা সৌম্য দিয়েছেন ৪৩ ডট।
শেষ পর্যন্ত সৌম্য ও সাইফের সেই ব্যাটিং তাণ্ডব কাজে লাগাতে পারেননি পরের ব্যাটাররা। তাদের মতো হাত খুলে ১০০+ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করাতো বহুদূরে; তাওহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহিদুল অঙ্কন, রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদরা সে অর্থে কিছুই করতে পারেননি।
সৌম্য-সাইফের অমন সাজানো-গোছানো ও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েও পরের দিকে একজনও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শান্ত ৮০ স্ট্রাইকরেটে ৫৫ বলে ৪৪ আর হৃদয় ৬৩.৬৩ স্ট্রাইকরেটে ৪৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। আর কোনো জুটিতে ৫০ রান ওঠেনি।
তাই সৌম্য ও সাইফ আউট হওয়ার পর ২৪.৪ ওভারে উঠেছে ১২০ রান। শেষ দিকে সোহান ২০০ স্ট্রাইকরেটে ৮ বলে ১৬ আর অধিনায়ক মিরাজ ১০০ স্ট্রাইকরেটে বল সমান ১৭ রানের দুটি ইনিংস না খেললে হয়তো সেই রানও যোগ হতো না।
সৌম্য ও সাইফের অমন চোখধাঁধানো, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর বাংলাদেশের বাকি ব্যাটারদের কেউ একজনও আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাট করতে পারেননি। হৃদয়, শান্ত, অঙ্কন, রিশাদ, নাসুমদের ব্যাটিংয়ের সময় আবার মনে হচ্ছিল উইকেট বুঝি আগের মতোই আছে!
সৌম্য (৪৩) ও সাইফ (৪৪) দুজনে মিলে ১৫৮ বলে ৮৭ ডট দেওয়ার পর বাকিরা যখন ১৪২ বলে ৭০ ডট দেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, বাকি অংশের ব্যাটিংটা আসলে একই আছে।
শুধু বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ২৪.৪ ওভারই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের প্রথম অংশ দেখেও অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি উইকেট বদলায়নি? সৌম্য-সাইফই কি বেশি ভালো খেলে ফেলেছেন?
হ্যাঁ, তাই। সেঞ্চুরি করতে না পারলেও সৌম্য আর সাইফ দুজনই অসাধারণ খেলেছেন। বেশ কিছু শট খেলেছেন, যা স্মৃতিপটে এঁকে থাকবে বহুদিন।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম