পুরান ঢাকায় মাঠ দখল করে মার্কেট, উচ্ছেদ করলেন বিএনপি নেতারা
পুরান ঢাকায় লক্ষ্মীবাজারে খেলার মাঠ দখল করে গড়ে ওঠা অস্থায়ী মার্কেট উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। একইসঙ্গে মাঠটি শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য সবসময় উম্মুক্ত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সূত্রাপুর থানা বিএনপি ও স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নেতৃত্বে মাঠটি উচ্ছেদ করা হয়। মাঠের ফটকে খেলাধুলার জন্য সংরক্ষিত এমন ব্যানারও টানিয়ে দেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের এমন উদ্যোগে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। ভবিষ্যতে যাতে কেউ মাঠ আবার দখল করতে না পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে দখল হওয়া খেলার মাঠ ফেরত পেয়ে খুশি শিশু-কিশোররাও।
২০২১ সালের ১০ মার্চ পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার মাঠ দখলমুক্ত করে শিশুদের জন্য খুলে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। রেলিং দিয়ে ঘিরে রাখা পার্কটি এই এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলার একমাত্র মাঠটি এতদিন ফাঁকা ছিল। দিন-রাতে ফুটবল-ক্রিকেট খেলে মাতিয়ে রাখত মাঠটি। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয়ে কিছু লোকজন মাঠটি দখল করে চৌকি বসিয়ে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করে ৩০ জনের বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দেয়।
দিনেদুপুরে মাঠটিতে মার্কেট তৈরি করায় এলাকার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভয়ে কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করেননি। তবে বিষয়টি নজরে আসার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেরাই এটি দখলমুক্ত করে দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান মিন্টু জানান, দলের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র মাঠ দখল করে মার্কেট বসিয়েছে এমন খবর পাওয়ার পরই মহানগরের শীর্ষ নেতারা এটি উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আজকে সূত্রাপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতারা মাঠ অবৈধ দখলমুক্ত করেছেন। আশা করি, আর কেউ মাঠ দখলের সুযোগ পাবে না।
এদিকে উচ্ছেদ শেষে সূত্রাপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাঠ আবার যাতে কেউ দখল করতে না পারে তা ৪২ এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দ দেখভাল করবেন। বিএনপির নামে এখানে কেউ দখল করবেন, চাঁদাবাজি করবে তা চলতে দেওয়া হবে না।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই মাঠ সিটি করপোরেশনের। এখানে আমাদের বাচ্চারা খেলাধুলা করবে আগের মতো। কেউ যদি এখানে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান চালু করতে চান তাহলে আবার উচ্ছেদ হবেন। মাঠের মধ্যে কেউ ব্যবসা করার চেষ্টা করবেন না।’
মাঠটি অবৈধ দখলমুক্ত করার সময় ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসূদ আফসার, সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাজী আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়েজসহ দলের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উচ্ছেদের পর বিএনপির নেতা মাসূদ আফসার বলেন, ‘যারা এই মাঠে দোকান বসিয়েছে তারা বিএনপির কেউ না। আমরা লক্ষ্মীবাজারে কোনো অবৈধ দখল হতে দেবো না। সূত্রাপুর থানা নেতৃবৃন্দ যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে করে আমরা বিষয়গুলো তদারকি করব।’
এদিকে মাঠ দখল করে মার্কেট তৈরির বিষয়টি জানার পর দলের দায়িত্বশীলদের নজরে আনার কথা জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অন্যায় করলে তারা ছাড় পাচ্ছে না এটা আবারও প্রমাণ হয়েছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাঠ দখলের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর মহানগর দক্ষিণের নেতাদের জানানো হয়। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীবাজার সমাজ কল্যাণ সংঘের নামে একটি নামসর্বস্ব সংগঠনের নামে মাঠটি দখল করেন স্থানীয় কিছু লোকজন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনীতিতে সক্রিয়। সিটি করপোরেশন উচ্ছেদের পর লক্ষ্মীবাজারের দুটি মাঠ ফাঁকা ছিল। একটিতে খেলাধুলা করত, অন্যদিকে দোলনা, স্লিপার বসিয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। সেখানে ছোট বাচ্চারা আনন্দে সময় কাটাতো। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর খেলাধুলা করার মাঠটিতে দুই ঈদে ‘ঈদ মেলা’ করে এই চক্র। বৈশাখী মেলায়ও মাঠটিকে বিভিন্ন রাইড বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে দেয় এই চক্রের লোকজন।
সম্প্রতি স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে মাঠটিতে ৩০টি চৌকি বসানো হয়। সপ্তাহে প্রতি দোকান থেকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে উপরে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় মাঠ। গত কয়েদিন ধরে মাঠটিতে দোকানপাট বসিয়ে বিক্রিও শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোকে বিভিন্ন ধরণের কাপড়, গহনার, লেডিস পার্স বিক্রি করা হত।
উচ্ছেদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একজন বিক্রেতা বলেন, ‘অ্যাডভান্স টাকা দিতে হয়েছে। আলাদা করে চৌকি কিনতে হয়েছে। এখন উচ্ছেদ করে দিয়েছে। টাকা ফেরত পাবো কি না জানি না।’
তবে নির্বাচনের পর আবারও মাঠে দোকান দেয়া যাবে এমন আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান এই দোকানি।