পুরো অঞ্চলকে গভীর সংকটে ফেলেছেন নেতানিয়াহু, উপায় কী?

2 hours ago 1

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন এক মোড়ে দাঁড়িয়েছে। জেরুজালেমের পূর্বে মালে আদুমিম বসতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন—‘কোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না, এই ভূমি আমাদের।’ বসতি সম্প্রসারণের জন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিতর্কিত ‘ই১’ এলাকায় ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি তৈরি হবে। এতে পশ্চিম তীর কার্যত বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হবে—যেটি ফিলিস্তিনিরা বহুদিন ধরে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখে আসছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ১৯৬৭ সালের পর নির্মিত এসব বসতিই অবৈধ, কিন্তু ইসরায়েল বারবার তা অগ্রাহ্য করছে।

নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপ শুধু নতুন সংকটই তৈরি করছে না, বরং গত কয়েক দশক ধরে টিকে থাকা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনই শান্তির একমাত্র পথ। তাদের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা সতর্ক করেছেন, নেতানিয়াহুর নীতি পুরো অঞ্চলকে গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৪৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশগুলো এখনও দ্বিধায় রয়েছে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সম্প্রতি এক ঘোষণায় ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভোট দিয়েছে। মাত্র ১০টি দেশ এর বিরোধিতা করেছে। এ প্রস্তাবে হামাসের হামলার নিন্দার পাশাপাশি গাজায় ইসরায়েলের বেসামরিক স্থাপনায় আক্রমণ ও অবরোধকেও নিন্দা জানানো হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বিশ্বজনমত ক্রমেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ঝুঁকছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখনো শক্তভাবে বিরোধিতা করছে।

এই প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ধরনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও ইসরায়েল সফরে গেছেন, কারণ কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ওয়াশিংটন ও তার মিত্রদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত সতর্ক করেছে, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ হলে আব্রাহাম চুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ সতর্কবার্তা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েলের নীতির কারণে আরব দুনিয়ায় গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু এইসব রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে গাজার মানবিক পরিস্থিতিতে। গাজা নগরীতে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলা ও হুমকির মুখে অন্তত ২ লাখ বাসিন্দা নগরী ছেড়ে পালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা নগরীর ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ২৩ মাসে গাজায় নিহত হয়েছে ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজারেরও বেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ পালানোর পথ খুঁজছে, অথচ নিরাপদ আশ্রয় কোথাও নেই। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, গাজার ১০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়াবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা ধ্বংস করে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছে। জাতিসংঘ ও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিলেও ইসরায়েলের কট্টর নীতি ও মার্কিন সমর্থন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এই অচলাবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সমঝোতা হলেও, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ঘোষণা সেই সম্ভাবনাকেও প্রায় অসম্ভব করে তুলছে।

তথ্যসূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স

Read Entire Article