পুলিশকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ফের অটোরিকশার দাপট চট্টগ্রামে

3 months ago 8

কয়েকদিন চলাচল বন্ধ থাকার পর বন্দর নগরীতে ফের পুলিশকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত দ্রুতযানের অটোরিকশা। বিক্রিতেও যেন কমতি নেই। অভিযানের পরও থামছে না তাদের গতি। নগরীর এপার থেকে ওপার গতির ঝড় তুলে ব্যস্ততম সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।   

নগরবাসীর মতে, পুলিশের ভয়ে নগরীর ব্যস্ততম সড়কে চলাচলের সহস হয়নি অটোরিকশা চালকদের। গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে হরদম ব্যস্ততম সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রথম দিকে এলাকায় অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত দ্রুতযানের এ রিকশাগুলো চলাচল শুরু করেছিল। কিছু কিছু রিকশা অলি-গলি ছেড়ে নগরীর ব্যস্ততম সড়কে চলাচল করত। তবে ৫ আগস্টের পর সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলের সাহস দেখিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে প্রথম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু করলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। তখন তারা দাবি করেছিল যে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে সিএনজির যাত্রী অনেকাংশে কমে গিয়েছে। ভাড়ায় পার্থক্য হওয়াতে যাত্রীরা ব্যাটারির রিকশায় চড়ছেন। তাদের এমন দাবিতেও আটকানো যায়নি অটোরিকশাকে। 

শুরুতে প্যাডেল চালিত রিকশায় মোটর বসিয়ে ৪টি ব্যাটারি স্থাপন করে সড়কে চলাচল শুরু করে অটোরিকশা। ক্রমান্বয়ে যাত্রীদের এ সব রিকশার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর চায়না থেকে অটোরিকশার বডি/কেসিং আমদানি শুরু হয়। পরে সড়কে ছোট চাকা বিশিষ্ট বিভিন্ন ডিজাইনের রিকশা ব্যস্ততম সড়কে চলাচল শুরু  করে। নগরীর হালিশহর, আমবাগান, ঝাউতলা, বহদ্দারহাট, নতুনব্রিজ ইত্যাদি এলাকায় এসকল রিকশা তুলনামূলক বেশি। 

অভিযোগ আছে, বৈদ্যুতিক চার্জে চলা অটোরিকশাগুলোর কারণে লোডশেডিংয়ের মাত্র বেড়েছে। রিকশার গ্যারেজ মালিকরা কৌশলে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার টেনে ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করেন। এলাকাভিত্তিক পিডিবির লাইনম্যান ও চেকারদের হাতে রাখেন তারা। ফলে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছেদের অভিযান পরিচালিত হওয়ার খবর সময় ওই লাইনম্যান, চেকাররা গ্যারেজ মালিকদের পৌঁছে দেন। সুবিধাভোগী গ্যারেজ মালিকরা রিকশাগুলো সড়কে চলাচল যায়েজ করতে টোকেন বাণিজ্য শুরু। যার একটি অংশ প্রশাসনের কাছে যেত। 

একাধিক অটোরিকশা চলক জানান, এক সময় টোকেন সড়কে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ দিত। দৈনিক ৮০ থেকে ১০০ টাকা টোকেন বাবদ দিতে হত। সড়কে পুলিশে ধরলে টোকেন দেখালে ছেড়ে দিত। যেসব রিকশা টোকেনের আওতা নেই তাদেরকে হয়রানি হতে হতো। ৫ আগস্টের পর এখন আর কোনো টোকেনের টাকা দিতে হয় না। তবে অন্যভাবে টাকা আদায়ের পরিকল্পণার গুঞ্জন রয়েছে।

গত ১৮ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নগরীর কাপাসগোলা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিজরা খালে পড়ে শিশু সেহরিনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসে ট্রাফিক বিভাগ। ঘটনার পর দিন শনিবার নগরীতে ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে জব্দ হওয়া অটোরিকশায় ছেয়ে গেছে ট্রাফিক বিভাগের দুটি ড্যাম্পিং (সদরঘাট ও মনছুরাবাদ)।

 গত ২৩ এপ্রিল নগরীর হালিশহরে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

নগর পুলিশের তথ্যমতে, দুদিনে প্রায় তিন হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন থানা এলাকায় গড়ে ওঠা গ্যারেজগুলোতেও অভিযান চলমান। তবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বিক্রির কতটি শো-রুম রয়েছে তার কোনো তথ্য পুলিশের কাছেও নেই। 

পুলিশের দাবি, অটোরিকশা গ্যারেজগুলো অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মো. রায়হান কালবেলাকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার ভাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা চেয়ে অনুপাতে অনেক কম। সময়ও বাঁচে। তবে অদক্ষ এবং কিশোর চালকদের জন্য দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। অনেক নারীও সংসার চালাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। সরকার এবং চসিক এ রিকশাগুলোকে পারমিটের আওতায় আনতে পারলে এ খাত থেকে রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এতে অনেক পরিবারও বাঁচবে পাশাপাশি সরকারের কোষাগারে রাজস্ব ঢুকবে। 

মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান কালবেলাকে বলেন, চলমান অভিযান আইওয়াশ মাত্র। আমদানি বন্ধ করা গেল না, সড়কে-গ্যারেজে অভিযান চালানো হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ঢুকছে তাহলে মূল জায়গায় বন্ধ না করে নগরীতে অভিযান চালানো হলে ইয়াবা আসা তো বন্ধ হবে না। সুতরাং প্রশানসকে প্রথমে আমাদানি বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম শহরে মানুষের তুলনায় যাতায়াতে যানবাহনের সংখ্যা কম। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহর উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা। এসব এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশারও প্রয়োজন। তবে সমতল এলাকাগুলোতে নয়।

তিনি আরও বলেন, একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেমন-চাকার সাইজ কত হতে পারে, ব্রাক সিস্টেম কি ধরণের হতে হবে, চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো নিরাপদ বাহনে পরিণত করা যেতে পারে। অন্যদিকে এগুলোকে আইনি বৈধতা দেওয়া। তা না দিলে লাভবান পুলিশ এবং অসাধু চক্রের। এটাকে বৈধতা না দেওয়ার জন্য তারাই চেষ্টা করতেছে। কারণ বৈধতা দিলে তাদের অবৈধ ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার কোনো রাজস্ব পাবে না।  চসিক, বিআরটিএ যদি আলাদা ডিপার্টমেন্ট খুলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনান জন্য তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।   

শো-রুমে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম কালবেলাকে বলেন, শো-রুমে অভিযান করা আমাদের প্রবিশনে নেই। সেটি নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। এখানে আমদানিকারকের ব্যাপার আছে। তাই এ বিষয়ে কর্তপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

যে রিকশাগুলো জব্দ করা হয়েছে সেগুলো ছাড়ছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের ড্যাম্পিংয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা নেই। সাধারণত জব্দ হওয়ার ২১ দিন পর রিকশাগুলোকে ফাইন নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিগত দিনে জব্দ হওয়া রিকশাগুলো একই ধারাবাহিকতা ছাড়া হবে। 

Read Entire Article