পোষ্য কোটার পক্ষে নন রাবির অনেক শিক্ষক

3 hours ago 3

পোষ্যকোটা ইস্যুতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষকদের অনেকে পোষ্য কোটার পক্ষ নিলেও এ ব্যবস্থাকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক।

পোষ্য কোটা ব্যবস্থা বিলোপের দাবি জানানো শিক্ষকদের একজন ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পোষ্য কোটা কোনোকালেই যৌক্তিক ছিল না আমার কাছে। আমি একজন শিক্ষক, আমি সবচেয়ে বড় পদে আছি। আমার সন্তানেরা সব থেকে বেশি প্রিভিলেজ পাবে পড়ালেখার ক্ষেত্রে। তারা আরও বেশি মেধাবী হবে। যদি না হয় আমার সে সামর্থ্য আছে অন্য জায়গায় পড়ানোর। আমি বেসরকারিতে পড়াতে পারবো বা বিদেশে পাঠাতে পারবো। শিক্ষা ও গবেষণা বন্ধ করে কোনো কিছুকেই সমর্থন করি না আমি। এগুলো বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষার্থীর দাবি, এমনকি শিক্ষকদের দাবিও আমি সমর্থন করি না।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন বলেন, ‘পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের পক্ষে আমি না, আবার এভাবে রাখার পক্ষেও না। কারণ এর অপব্যবহার হয়। কিন্তু রাষ্ট্রে যারা চাকরি করেন তাদের একটা অধিকারের বিষয় থাকে। এটা সবখানে থাকে, প্রায় সব দেশেই থাকে। একসময় যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না, সন্তানেরা যাতে আমাদের কাছে থাকতে পারে সেজন্য পোষ্য কোটার প্রয়োজন ছিল। এখন যোগাযোগব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছু উন্নত হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যেহেতু কম সচ্ছল, উপযুক্ত পরিবেশ পায় না, তাদের সন্তানদের জন্য ১-২ শতাংশ বা আলাপ সাপেক্ষে কিছু কোটা রাখা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটার ন্যায্যতা বিধান। কিন্তু শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে দেমাগ দেখিয়ে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন, আবার ২০২৪ সালে সব কোটা বহাল করেছিলেন। পরিণতি তো আমরা সবাই জানি। সেইভাবে, ত্যানা অনেক পেঁচিয়ে আজ যেখানে এসে আমরা পৌঁছালাম, যেভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে ধস্তাধস্তি করতে দেখলাম তা খুব লজ্জার। এরকম ঘটনা আমি আগে দেখিনি দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে।’

আরও পড়ুন:
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও

কোটা ইস্যুতে থমথমে রাবি ক্যাম্পাস, নেই রাকসুর প্রচারণাও

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিব জাকারিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন পোষ্য কোটা বাতিলের বিষয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি আয়োজন করেছিল তখন আমি শিক্ষক হিসেবে প্রথম স্বাক্ষর করেছিলাম। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে পোষ্য কোটা থাকার কোনো কারণ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো কারণ দেখি না। এছাড়া রাকসুর সামনে করে পোষ্য কোটার দাবিটা আমি স্বাভাবিকভাবে দেখছি না। এটার ভেতরে কী রাজনীতি চলছে এটা আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারব না। তবে যে সময়টা বেশি নেওয়া হলো সেটা সঠিক হয়নি। খুব সুন্দরভাবে ডাকসু, জাকসু হয়ে গেল, এভাবে রাকসুও হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এটা সবার জন্য সম্মানের হতো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও সম্মানের হত। কিন্তু যেটা ঘটছে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্মানের না। আমি খুবই আশাহত, এ ব্যাপারটা নিয়ে যে রাজনীতি আসলে শোভন না।’

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাতিল করার পর গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পোষ্য কোটা। এ ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন বসে যান আমরণ অনশনে। এসময় অসুস্থ হলে চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেটে সে সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে ৪৪২ শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন। এ শিক্ষাবর্ষে মেধাতালিকায় ৭৭১তম হয়েও এক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। অথচ পোষ্য কোটায় সাত হাজার ৭০০ এর উপরের অবস্থানে থেকেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

মনির হোসেন মাহিন/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article