প্রশ্নফাঁসসহ অভিযোগের পাহাড় কাজী আনিছের বিরুদ্ধে

4 hours ago 5
নারী শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন-উত্তর সরবরাহ, সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি, অবৈধভাবে পদোন্নতি নেওয়া, সাংবাদিক বহিষ্কারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা, ছাত্রলীগ নেত্রীদের সঙ্গে রাতে ক্যাম্পাসে মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী এম আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে। জানা যায়, গত ১২ মার্চ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মোবাইল জার্নালিজম কোর্সের (এমসিজে ৩০৮) প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৩ মার্চ অভিযুক্ত শিক্ষকের পড়ানো কোর্স মোবাইল জার্নালিজম (এমসিজে ৩০৮) সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই ব্যাচের কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ ও মোবাইল জার্নালিজম নামে দুটি কোর্স নিয়েছেন আনিছ।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি মেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়, ওই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামের ব্যক্তিগত ও দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি তাকে একাধিকবার প্রশ্নপত্রফাঁসের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর ১ম সেমিস্টারে ৩.৬৯, ২য় সেমিস্টারে ৩.৮৯, ৩য় সেমিস্টারে ৩.৬৩, ৪র্থ সেমিস্টারে ৩.৮৯ এবং সর্বশেষ ৫ম সেমিস্টারে ৩.৯৪ সিজিপিএ রয়েছে। ওই ব্যাচের কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ পরীক্ষা গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়; কিন্তু ওই নারী শিক্ষার্থীর কাছে সরবরাহকৃত পিডিএফের মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায়- ২নং প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৬টা ৪৭ মিনিটে। একই সঙ্গে ৪নং প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা মন্তব্য করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ওই শিক্ষক একজন সাইকো। তিনি তিলে তিলে শিক্ষার্থীদের শেষ করে দিতেন। কোনো শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে কথা বললে ওই শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে সব জায়গা থেকে মাইনাস করতেন। ক্লাস, পরীক্ষায় হয়রানি করতেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী আবু বকর রায়হান কালবেলাকে বলেন, ‘কাজী আনিছ স্যার বিভাগে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কিছু শিক্ষার্থীকে আলাদা সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিক সমিতিতে কাজ করতাম। এই শিক্ষকের কথামতো কাজ না করায় ক্লাসে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে আমাকে অপমান করেছেন। এ ছাড়া চাকরিরত আমার বিভিন্ন হাউসে আমাকে চাকরিচ্যুত করার জন্যও উনি ফোন করেছেন।’ আরও অসংখ্য শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করেছেন। ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষক কাজী আনিছের সঙ্গে সখ্যতার কারণেই ওই নারী শিক্ষার্থী অভাবনীয় ফলাফল করে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছিলেন। প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, প্রশ্ন যখন মডারেশন হয় তখন পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরাও থাকেন। এখানে প্রশ্নফাঁস হলে যে কারও কাছ থেকে হতে পারে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকও পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন। এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিত করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগের বিষয়ে কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, আসলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি বিব্রত। নির্দিষ্ট কাউকে সুবিধা কেন দেব? আমার দল ভারি করার কিছু নেই। প্রত্যেক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একই অভিযোগ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’ প্রশ্নফাঁস ছাড়াও কাজী আনিছের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি বিভাগীয় প্লানিং কমিটির মিটিংয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেক সহকর্মী মাহমুদুল হাসানকে ‘কুত্তা’ বলে সম্বোধন করেন তিনি। যা তিনি নিজেও স্বীকার করেন। ২০২১ সালের ২৭ জুন আবেদনের যোগ্যতার যথাযথ শর্ত পূরণ না করে আবেদন করায় সে সময় তার পদোন্নতি আটকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট। এ ছাড়া খেলা নিয়ে বাগবিতণ্ডায় আরেক সহকর্মীকে থাপ্পড় মারতে তেড়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে তিনি একাডেমিক কার্যক্রমের বাহিরে থাকবেন। এ ছাড়া এ সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
Read Entire Article