জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণার দিলেও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্য ভর্তি পুনর্বহাল রেখে প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে পোষ্য কোটার নাম বদলে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা’ নাম দেওয়া হয়েছে । যেখানে শর্তসাপেক্ষে পোষ্যরা ভর্তি হতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর আগে গত বুধবার (১৩ আগস্ট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় সব কোটা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় শর্ত সাপেক্ষে পোষ্য ভর্তির এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় জনসংযোগ অফিস।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পোষ্যদের ভর্তি পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৩২ নম্বর পেতে হবে। যা আগে ছিল ২৭ নম্বর। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্বামী-স্ত্রী ও ভাইবোনদের জন্য থাকা কোটা বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে শুধু ঔরসজাত সন্তানরাই পোষ্য কোটার আওতায় ভর্তির সুযোগ পাবে।
প্রতিটি বিভাগে সর্বোচ্চ ৪ জন ভর্তি হতে পারবে। পূর্বে পোষ্য ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট আসনসংখ্যা নির্ধারিত না থাকলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪০ জনের অধিক ভর্তি করা যাবে না। এছাড়া ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানকে তার কর্মরত বিভাগে পোষ্য হিসেবে ভর্তি করানো যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
পোষ্য ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো অভিভাবকের অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে অঙ্গিকারনামায় উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা পরবর্তী শিক্ষাপর্ষদের সভায় রিপোর্ট সাপেক্ষে অনুমোদন ও কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের মৌখিক ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য। একইসাথে কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দেওয়া হবে জানান তিনি। এসময় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও তখন জানান তিনি।
এদিকে মৌখিক ঘোষণায় বাতিলকৃত পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলী জাকির শাহারিয়ার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, পোষ্য কোটা নিয়ে এত আন্দোলন ও অনশন কর্মসূচির পর ভিসি স্যার অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করেন। এতদিন পর ঠিক জাকসুর আগমুহূর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করি। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে ‘জাকসু অথবা পোষ্যকোটা পুনর্বহাল’ এ দুটি বাইনারিতে ঠেলে দিচ্ছেন।
আরেক শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম তার পোস্টে বলেন, পোষ্য ভর্তি নিয়ে প্রশাসন যে ধৃষ্টতা দেখালো, এটা সত্যিই আমাদের মর্মাহত করেছে। যারা দাবি করেছিল পোষ্য ভর্তি বাতিল করতে হবে তাদের দাবিকেও কর্ণপাত করা হল না, আর যারা যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছে তাদের দাবিও কর্ণপাত করা হল না।
কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা শাখা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে পাস নম্বর কত হবে, সেটা নিয়ে শিক্ষকরা একমত হননি, বিধায় বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পোষ্য ভর্তির ক্ষেত্রে বাকি বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
সৈকত ইসলাম/এমএন/জেআইএম