চলচ্চিত্রের বেশ কজন শিল্পী প্রয়াত হয়েছেন গত এক বছরে। আলাদা করে তাদের স্মরণের আয়োজন করা যায়নি নানান কারণে। তা ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের পর গা ঢাকা দিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পীসমিতির আওয়ামী সমর্থক একটি অংশ। দেরিতে হলেও প্রয়াতশিল্পীদের স্মরণের আয়োজন করা হলো, যা হয়ে উঠলো জীবিত শিল্পীদের মিলনমেলা।
আজ (৭ সেপ্টেম্বর) রোববার দুপুর থেকে ছিল এফডিসি-কেন্দ্রিক শিল্পীদের আয়োজন ‘স্মৃতির আয়নায় কিংবদন্তির দৃশ্য’। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের নায়ক-নায়িকা, খলনায়ক-খলনায়িকা, কৌতুকশিল্পী থেকে পার্শ্ব চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল বিএফডিসি প্রাঙ্গণ। প্রয়াতদের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি পরস্পরের কাছে দোয়া চেয়েছেন শিল্পীরা।
কিংবদন্তি অভিনেতা সোহেল রানা সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, ‘কে কখন চলে যাব, শিওর না। যদি কোনো ভুল-ত্রুটি কিংবা অন্যায় করে থাকি, আজ এই মুহূর্তে আমি এই সুযোগটা নেব, আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি কখন মরে যাব, জানি না। তারা যেন আমার ভুল-ত্রুটি অন্যায়গুলোকে ক্ষমা করে দেয়। এবং আমার জন্য দোয়া করেন, যাতে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছি, ভুল যে কিছু হয়নি তা নয়, হয়তো ভুল অনেক করেছি। আমি ভুলের জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনে সৃষ্টিকর্তার কাছে যাব, সেই সময়ে যেন আমি নীতি বা আদর্শ নিয়ে সঠিক মুসলমান হিসেবে আল্লাহর কাছে যেতে পারি, সে জন্য সকলের কাছে আমি দোয়া চাচ্ছি।’
এই আয়োজনে অংশ নিয়ে আনন্দ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর শিল্পীসমিতির আয়োজনে অংশ নিয়ে ভালো লেগেছে। অনেক সহকর্মীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে। ভালো একটা সময় কেটেছে।’
খলনায়ক আহমেদ শরীফ বলেন, প্রশংসিত এক উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পীসমিতি। আমরা শিল্পীরা এফডিসিতে আসতে চাই। আগে এমন আয়োজন হয়নি। এবারই প্রথম প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার নিয়ে এমন আয়োজন করা হলো৷ বর্তমান শিল্পী সমিতিকে ধন্যবাদ।’
প্রয়াত অভিনেত্রীর সুষমার ছেলে বলেন, শিল্পী সমিতিকে ধন্যবাদ এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য। যেখানে মৃত্যুর একদিন পর মানুষ ভুলে যায়, সেখানে শিল্পীসমিতি দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুলের ছেলে বলেন, আমার বাবা নেই। কিন্তু তাকে স্মরণ করেছে শিল্পীসমিতি। অনেক ধন্যবাদ সমিতিকে৷ চলচ্চিত্রের সোনালি সময় নেই, কিন্তু সবাই চেষ্টা করছে সময়টাকে ফিরিয়ে আনতে। বাবা পরিবারের চেয়ে সিনেমা বেশি ভালোবাসতো। নিজের কথা চিন্তা না করে সমিতিতে আসতো। তাকে আজ স্মরণ করার জন্য সমিতিকে ধন্যবাদ।’
আয়োজন প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য রুমানা ইসলাম মুক্তি বলেন, ‘প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার এবং গুণী শিল্পীরা সাড়া দিয়ে আয়োজনে অংশ নিয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে আমরা বেশি সাড়া পেয়েছি। অনেক সিনিয়র শিল্পী হাজির হয়েছেন। প্রয়াত অনেক শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সবাই আয়োজনে খুশি, এতেই আমাদের স্বার্থকতা।’
অভিনেতা সনি রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি আয়োজন উপহার দেওয়ার৷ সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।
এই উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন শিল্পীসমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ কমল পাটেকর, কার্যনির্বাহী সদস্য চুন্নু, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান ও অভিনেতা শিবা শানু।
এমআই/আরএমডি/জেআইএম