প্লট-ফ্ল্যাট হস্তান্তরে রাজউক বা কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে না

2 hours ago 2

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অধীনে উন্নয়নকৃত আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরে রাজউক বা কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে না। একটি নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নিবন্ধন করে জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা যাবে।

রোববার (১০ নভেম্বর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

আগে আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের দলিল সম্পাদনের জন্য লিজদাতাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন অপরিহার্য ছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনের ফলে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান, হস্তান্তর (বিক্রয় বা বণ্টন) সংক্রান্ত দলিল সম্পাদনের জন্য কোনো অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন থাকবে না।

তবে প্লটের বিভাজন বা একত্রীকরণ এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ব্যবহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের নিয়ম আগের মতোই বজায় থাকবে।

দলিল মূল্য অনুসারে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের জন্য ২ শতাংশ এবং প্লটের জন্য ৩ শতাংশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সরাসরি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিতে হবে। এ ফি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অর্থনৈতিক কোড অনুসারে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) হিসেবে আদায় করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তর পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সেবা সহজীকরণ, লিজ গ্রহীতাদের দুর্ভোগ ও হয়রানি লাঘব এবং দুর্নীতি দূর করতে বিদ্যমান প্রথা ও পদ্ধতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

১. গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার উন্নয়নকৃত ও বরাদ্দ করা আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি, হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা বণ্টন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের বিদ্যমান প্রথা বাতিল করা হলো।

এ প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে উপরোক্ত কার্যক্রমের জন্য তফসিলে বর্ণিত আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তবে লিজ দলিলের অন্যান্য শর্ত যেমন- কোনো প্লটের বিভাজন বা একাধিক প্লটের একত্রীকরণের মাধ্যমে প্লটের আয়তনের পরিবর্তন এবং প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণির পরিবর্তন অর্থাৎ মাস্টার প্ল্যানের কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের বর্তমান পদ্ধতি বহাল থাকবে।

২. দলিলগ্রহীতাকে উন্নয়ন করা ফ্ল্যাট বা ভবনসহ ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ২ শতাংশ হারে এবং শুধু প্লট বা ভূমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের ৩ শতাংশ হারে অর্থ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুকূলে জমা দিতে হবে। এছাড়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে একই হারে ও পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে (প্রাতিষ্ঠানিক কোড নম্বর: ১৩২০১০১১১৮৮২৭, অর্থনৈতিক কোড নম্বর: ১৪২২৩১২) নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) হিসেবে আদায় করা হবে।

৩. লিজ করা সম্পত্তির মালিকানা সম্পর্কিত বিরোধ পরিহার এবং মালিকানা রেকর্ড লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ ও হালনাগাদ রাখতে প্লট বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিল সম্পাদনের পর অবিকল নকলের একটি কপি (সার্টিফাইড কপি) এবং নামজারির পর এ সম্পর্কিত রেকর্ডপত্র ক্রেতা বা, ক্ষেত্রমত, দলিলগ্রহীতার দলিল সম্পাদনের ৯০ দিনের মধ্যে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে ব্যর্থ হলে দৈনিক ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা যাবে। হস্তান্তর দলিল বা নামজারি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র লিজদাতা প্রতিষ্ঠানে দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে মালিকানা রেকর্ড হালনাগাদ করতে হবে। হালনাগাদ রেকর্ডপত্র রেজিস্ট্রার্ড ডাকের পাশাপাশি ই-মেইল বা ইলেক্ট্রনিক অন্য কোনো মাধ্যমে ক্রেতা বা ক্ষেত্রমতে দলিলগ্রহীতাকে অবহিত ও পাঠাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে তা পরিপালনে ব্যর্থ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে কর্তব্য-কর্মে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. লিজ দলিলের মেয়াদ শেষে (৯৯ বছর পর) তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন করা বলে গণ্য হবে এবং অনুচ্ছেদ-২ এ বর্ণিত হস্তান্তর ফি আদায়ও রহিত হয়ে যাবে। তবে লিজদাতা প্রতিষ্ঠানের পূর্বানুমতি ছাড়া প্লটের বিভাজন বা একাধিক প্লটের একত্রিকরণ, প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবহার শ্রেণির পরিবর্তনসহ মাস্টার প্ল্যানের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।

৫. আবাসিক ছাড়া অন্যান্য (প্রাতিষ্ঠানিক, বাণিজ্য ও শিল্প) প্লট, ফ্ল্যাট বা স্পেসের হস্তান্তর ও নামজারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে লিজদাতা কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন গ্রহণের বিদ্যমান প্রথা বহাল থাকবে।

৬. যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে এবং উক্ত বিরোধে সরকারের স্বার্থের সংশ্লেষ রয়েছে; যে সব প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে অথচ ১৯৮৮ সালের ২৮ মার্চে পরে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করা হয়নি এবং যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাট ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মেয়াদে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সে সব প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্ষেত্রে লিজদাতা প্রতিষ্ঠান হতে অনুমোদন গ্রহণের বিদ্যমান প্রথা বহাল থাকবে। এ অনুচ্ছেদ এর অধীন লিজদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর অনুচ্ছেদ-২ এ বর্ণিত পদ্ধতি ও হারে ক্রেতা বা দলিলগ্রহীতাকে প্রযোজ্য ফি পরিশোধ করতে হবে।

৭. ওপরে বর্ণিত বিধানাবলীর আলোকে যে সব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান বা হেবা সূত্রে নামজারি; হস্তান্তর (বিক্রয়, দান, হেবা বা বণ্টন) দলিল সম্পাদন বা বাতিল; আম-মোক্তার দলিল সম্পাদন বা বাতিল এবং ঋণ গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে লিজ দাতা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। সেসব আবাসিক প্লট বা ফ্ল্যাটের তালিকা এ প্রজ্ঞাপনের অধীন যথা শিগগির সম্ভব, তফসিল আকারে প্রকাশ করা হবে। তবে প্রকাশিত তফসিলে পরবর্তীতে কোন ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা সংশোধনের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করেন।

এমএমএআর/জেআইএম

Read Entire Article