বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য ফি বাতিল হওয়া ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে লাগে আটটি সেমিস্টারের গ্রেডশিট। প্রতিটি সেমিস্টারের গ্রেডশিট তুলতে লাগে ১০০ টাকা অর্থাৎ ৮ সেমিস্টারে লাগে ৮০০ টাকা। সেই হিসাবে ফি বাতিল হওয়া ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে লাগে ৮০০ টাকা।
অথচ বাতিল হওয়ার আগে ৩০০ টাকা ফি দিয়ে ট্রান্সক্রিপ্ট তোলা যেত; সেখানে লাগতো মাত্র একটি চূড়ান্ত গ্রেডশিট ও প্রবেশপত্র।
ট্রান্সক্রিপ্ট নিতে প্রতিটি সেমিস্টার ও বর্ষের গ্রেডশিট জমা দেওয়ার ব্যাপারে গত ৩০ অক্টোবরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নোটিশে একটি নির্দেশে প্রদান করেন। সেখানে বলা হয়, ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে আবেদনপত্রের সঙ্গে সব সেমিস্টার/বর্ষের গ্রেডশিট (আপডেট ফলসহ) এর ফটোকপি সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হতে হবে বলে শর্ত দেন তারা।
অথচ এই নির্দেশনার বিপরীতে ভিন্ন কথা বলছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, যাদের স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সব গ্রেডশিট না দিলেও হবে। চূড়ান্ত গ্রেডশিট জমা দিলেই হবে। সমস্যা হলো- স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই যারা ট্রান্সক্রিপ্ট চায় তাদের জন্য সব গ্রেডশিট প্রযোজ্য। তিনি বলেন, ফেল ও নানান সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা সব গ্রেডশিট চেয়ে থাকি।
সরেজমিনে গেলে এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা উপরের নির্দেশ মানতে বাধ্য। তাই, ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সেটাই বলছি। ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে সময়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে জনবল সংকটও রয়েছে, সেজন্য তিন কর্মদিবসের কথা থাকলেও সম্ভব হয়ে ওঠে না।
ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে সব গ্রেডশিট জমা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে চলছে সমালোচনা। তারা মনে করেন, এটি বিলম্ব ও জটিলতা ছাড়া কিছুই না। এ ব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ফি বাতিল হওয়ার পূর্বে একটি মাত্র চূড়ান্ত গ্রেডশিট দিয়ে ৩০০ টাকায় ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতাম। ফি বাতিল হওয়ার পর আট সেমিস্টারের আলাদা আলাদা গ্রেডশিট জমা দিতে হচ্ছে। নাহলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আট সেমিস্টারের গ্রেডশিট তুলতে লাগে ৮০০ টাকা। তাহলে ফি বাতিল হওয়ার মধ্যে উপকার তো দেখি না; বরং জটিলতা। দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ফি বাতিল করা হলো। এখন দেখছি জটিলতা ও বেশি টাকা লাগছে। এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। জটিলতা ছাড়ায় চূড়ান্ত গ্রেডশিট দিয়েই আমরা ট্রান্সক্রিপ্ট নিতে চাই।
এ ব্যাপারে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ তানভীর কায়ছার কালবেলাকে বলেন, জটিলতা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা সহজলভ্যতে ট্রান্সক্রিপ্ট যাতে পায়, সে ব্যাপারে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে বলবো। আমাদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে অটোমেশন রয়েছে সেটার সুফল শিক্ষার্থীরা পাক সেটাই প্রত্যাশা।
গত বছরের ১৮ আগস্ট সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের ৩০০ টাকা ফি বাতিল করা হয়। এছাড়া তিন কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সরবরাহ করার কথা থাকলেও সেটি ৬ কর্মদিবসের মধ্যেও মেলে না। ফলে, অনেক সময় বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এদিকে উন্নতমানের সনদ ছাপানোর কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রতি সেমিস্টারের গ্রেডশিট স্ব বিভাগে যাতে পেয়ে যায়, সে ব্যবস্থা আমরা করবো। জটিলতা ছাড়াই ট্রান্সক্রিপ্ট তোলার ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসকে বলা হচ্ছে।