ফ্যাসিবাদের শাহবাগী ক্রীড়নক আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে

4 hours ago 8

শাহবাগের ক্রীড়নক, যাদের পাটাতনে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, জুলাইয়ের স্পিরিটের আলোকে নতুন বাংলাদেশ গড়ায় এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের কোনো বিকল্প নেই।

বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর নয়াপল্টনের জোনাকি কনভেনশন হলে এক ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

ইফতারপূর্ব সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১৬ বছর ছিল আমাদের জন্য এক দীর্ঘ চ্যালেঞ্জিং যাত্রা। এই সময়ে আমরা ফ্যাসিজমের করাল গ্রাসে শতাধিক ভাইকে হারিয়েছি, ফ্যাসিজমের নির্যাতনে আমাদের অসংখ্য ভাইয়ের শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে, আমাদের অনেক ভাই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, হাজার হাজার ভাই গুম হয়েছেন। অনেকে ফিরলেও এখনো ৬ জন ভাই গুম অবস্থায় আছেন। আমাদের অসংখ্য ভাই স্বাভাবিক ছাত্রজীবন কাটাতে পারেননি। অনেকে ছাত্রজীবন শেষ করতে পারেননি। জনশক্তিরা সবসময় ক্যাম্পাসে ভীতিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন। গেস্টরুম, র‍্যাগিং, মানসিক টর্চার-এসব অন্যায়ের শিকার হয়েছেন অসংখ্য ভাই। এইসব দমনপীড়নের কথা আমরা কখনো ভুলতে পারব না। অবশেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আল্লাহ আমাদের এ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

ছাত্র -জনতার গণঅভ্যুত্থানে একক কোনো মাস্টারমাইন্ড নেই উল্লেখ করে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, সেই অভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন। ফ্যাসিজমের পতনের আন্দোলনে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি। একটি ইমারত নির্মাণের জন্য অনেক উপকরণের প্রয়োজন হয়। ইমারত নির্মাণে ছোট-বড় কোনো উপকরণকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সবগুলো উপকরণের সংমিশ্রণেই একটি ইমারত নির্মিত হয়। তেমনি জুলাই অভ্যুত্থানও অনেক স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত চেষ্টার মধ্য দিয়ে সফল হয়েছে। এজন্য এ আন্দোলনে কোনো একক মাস্টারমাইন্ড নেই, কোনো একক নেতা নাই।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, এ আন্দোলনের মূল ক্রেডিট আমাদের শহীদ ও আহত হওয়া ভাইদের। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে জুলাইয়ের সে স্পিরিটের আলোকে নতুন বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখা। এই আন্দোলনে আমাদের দলীয় শহীদদের তালিকা আমরা প্রকাশ করিনি, সব শহীদদের সম্মিলিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা এই আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণকে স্বীকার করি।

তিনি আরও বলেন , জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে ট্রমা তৈরি হয়েছিল, সেই ট্রমা কাটিয়ে ওঠা এবং ছাত্ররাজনীতির গুণগত সংস্কার সাধন করে একে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা কাজ করছি। জুলাইয়ের স্পিরিটকে জাগিয়ে রাখার জন্য আমরা জুলাই এক্সিবিশনসহ বিভিন্ন আয়োজন করছি। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলের ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে সবার জন্য বিকশিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। তাই নিজেদের ব্যাপকভিত্তিক ছাত্রকল্যাণ ও সেবামূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছি।

ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনার আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে জাতির শিক্ষা যত উন্নত সে জাতি বিশ্বের বুকে ততটাই মর্যাদাপূর্ণ। আফসোস আমাদের স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী বেশি সময় পার করে এলেও আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আদর্শ চরিত্রবান দেশপ্রেমিক তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার ক্যাম্পাসগুলোতে বিপরীতে দেখছি অস্ত্র, রক্ত, লাশের স্তূপ। দেশবাসী শিক্ষার ক্যাম্পাসগুলোতে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য আর দেখতে চায় না। অনেক রক্তের বিনিময়ে দফায় দফায় জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। চব্বিশের আন্দোলন ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আমরা সাধারণ অভিভাবক হিসেবে প্রত্যাশা করি, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত হয়। চরিত্রবান দেশপ্রেমিক নাগরিক যেন বের হয়ে আসতে পারে।

ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বাংলাদেশের বিদগ্ধ, পরীক্ষিত ছাত্র সংগঠন উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে তারা তাদের প্রিয় সঙ্গী সাথীদের হারিয়েছে, অনেক মেধাবী ছাত্র জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। বিশেষ করে চব্বিশের যে দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলন, সেখানে চোখের সামনে পাখির মতো গুলি করে সন্তান ও সহকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের শহীদান কবুলে দোয়া ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তাফা হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধানসহ রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

এএএম/এএমএ

Read Entire Article