বাঁকখালী নদীকে সংকটাপন্ন ঘোষণা, দখলদার উচ্ছেদে হাইকোর্টের রায়

2 weeks ago 14

কক্সবাজার শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে নদীটিকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে নদীটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা এবং এর সীমানায় থাকা সকল দখলদারকে উচ্ছেদের নির্দেশও দেন আদালত।

রোববার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দীকা এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

রায়ে বলা হয়, নদীর সীমানায় বিদ্যমান সকল দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে আগামী ৪ মাসের মধ্যে তা উচ্ছেদের ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি পূর্বে প্রদত্ত রুল চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে নদী এবং নদী সংলগ্ন এলাকা ভিন্ন উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে, নদী এলাকার ম্যানগ্রোভ বন ফিরিয়ে আনতে এবং নদী এলাকায় ইতঃপূর্বে প্রদান করা সকল ইজারা বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায় অনুযায়ী, নদীটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়মিত তদারকির স্বার্থে মামলাটিকে আদালত চলমান মামলা হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি ৬ মাস পর পর অর্থাৎ, প্রতিবছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে উল্লিখিত নির্দেশ প্রতিপালন প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের করতে হবে।

আদালতে বেলা’র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ আশরাফ আলী ও অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদুল হক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হওয়া এই ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদী একসময় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া যাতায়াতের প্রধান পথ ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে এটি শত শত জাহাজ ও ট্রলারের আশ্রয়স্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এর দু’পারে অবস্থিত প্যারাবন উপকূলীয় জনবসতিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করত। এ নদীতে একসময় বিরল প্রজাতির লাল কাঁকড়াসহ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত।

তবে দেশের অন্যান্য নদীর মতো বাঁকখালীও দখল, নদী সংলগ্ন এলাকায় তামাক চাষ, প্যারাবন কেটে প্লট তৈরি ও স্থাপনা নির্মাণ, এবং কক্সবাজার পৌরসভার সকল ধরনের বর্জ্য ও হোটেল-মোটেলের বর্জ্য ফেলায় তলদেশ ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছিল। তবে নদীর অব্যবস্থাপনা থেকে এটিকে মুক্ত করতে ২০১৪ সালে বেলা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিল। এর বিরুদ্ধে দখলকারীরা ২০২৩ সালে অপর একটি রিট দায়ের করলেও আদালত আজ সেটি খারিজ করে দেন।

মামলার বিবাদীগণ হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসক (কক্সবাজার), কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রসহ (বর্তমানে প্রশাসক) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সচিব ও কর্মকর্তা।

এফএইচ/কেএইচকে

Read Entire Article