বাংলাদেশ-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতায় চরম বিপাকে ভারত

3 hours ago 3

গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো এককালের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা। গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। 

জনপ্রিয় সাপ্তাহিক নিক্কেই এশিয়া বলছে, ঐতিহ্যগতভাবে বৈরী সম্পর্ক থাকা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বোঝাপড়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের পথে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে উভয় সংকটে পড়েছে ভারত।

আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে স্বাগত জানায় পাকিস্তান। এরপর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই দেশের সরকারপ্রধান একান্তে সাক্ষাৎ করেন—যা দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এর দুই মাস পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান প্রথমবারের মতো নিয়মিত কার্গো শিপিং রুট চালু করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি মাইলফলক। ডিসেম্বরে সাত বছরের বিরতির পর দুই দেশের মধ্যে পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়। নতুন বছরেও সম্পর্কোন্নয়নের এই গতি অব্যাহত আছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন নয় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক সামরিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হয়েছে। জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফর করেন। যৌথ সামরিক মহড়া ও অস্ত্র স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা করেন তারা। ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে এমন বোঝাপড়া অসস্থিতে ফেলছে ভারতকে। 

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে স্থিতিশীল করার দায়িত্বে রয়েছে ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতে পালিয়ে থাকা হাসিনা। তার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ ইস্যু নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সরাসরি আলোচনা না করলেও, ইউনূস গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করেন। মিশরে অনুষ্ঠিত ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে হওয়া ওই বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যিই আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চাই। জবাবে, ড. ইউনূস সার্ক পুনরুজ্জীবিত করা এবং ঢাকায় এর শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

সার্ক পুনরুজ্জীবিত করতে ইউনূসের প্রচেষ্টা বিস্ময়কর। তার এই চিন্তা হয়তো আঞ্চলিক সহযোগিতার পুরনো ধারণার প্রতিফলন। তবে ভারত সার্কের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে দিল্লি এই পথে পা বাড়াতে চাইবে না। 

ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধান শক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাকে একইসঙ্গে পাকিস্তানকে সামলাতে হচ্ছে এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এরমধ্যে ঐতিহাসিক মিত্র বাংলাদেশও যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে সেটা হবে ভারতের জন্য উভয় সংকট। সবকিছু মিলে দিল্লির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। 

যদি সবকিছু প্রত্যাশা অনুযায়ী চলে তাহলে আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডে নির্ধারিত বিমসটেক সম্মেলন হবে ইউনূস এবং মোদির মধ্যে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। তবে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে- ইউনূসের সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাবে মোদি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান। এছাড়া মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির ভবিষ্যৎও এর ওপর নির্ভর করছে। 

Read Entire Article