বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক।
জাতিসংঘের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের জন্য এই প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
হাইকমিশনারের মতে, বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া জবাবদিহির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। যাদের মধ্যে আছেন ডিজিএফআইয়ের কয়েকজন সাবেক মহাপরিচালক এবং র্যাবের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
গত শনিবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৫ কর্মকর্তাকে ‘হেফাজতে’ নেওয়ার ঘোষণা দেয়, যাদের বিরুদ্ধে গত সরকারের সময়ে মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের দ্রুত একটি উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনে ন্যায়বিচারের কঠোর মানদণ্ডের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি আমি। এসব স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের সময় যারা মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন।
হাইকমিশনার বিপুলসংখ্যক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কিছু মামলা আগের প্রশাসনের সময় করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায্যবিচার নিশ্চিত করা এবং নির্বিচারে আটক থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া জরুরি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জোরপূর্বক গুম থেকে বেঁচে আসা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বিগত সরকারের সমর্থক ও সাংবাদিকরাও রয়েছেন। তাদের অনেকে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
হাইকমিশনার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন, অভিযোগের গুরুত্ব যাই হোক না কেন, চলমান কোনো মামলায় যেন মৃত্যুদণ্ডের রায় না দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হলো সত্য বলা, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এ ধরনের নিপীড়ন যেন আর না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমি এখনকার উদ্বেগগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের নিরিখে মোকাবিলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
জেপিআই/একিউএফ