বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করেছেন মমতা : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশের সম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এখানে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব করেছেন। ভিনদেশের একজন রাজনীতিবিদের এ প্রস্তাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা ও অপমান করার শামিল। এটি একটি স্বাধীন দেশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের হুমকি। বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে একজন সেক্যুলার ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবেই জানত। কিন্তু তার বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হলো- কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ভারতের প্রায় অধিকাংশ রাজনীতিবিদই বাংলাদেশের মানুষের স্বাজাত্যবোধ ও নাগরিক স্বাধীনতাকে মান্য করে না। সেই কাতারে মমতা ব্যানার্জিও তার অবস্থান পরিষ্কার করলেন। এরা নিজ দেশের অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করে। গুজরাটের হাজার হাজার মুসলিম হত্যার সেই ট্র্যাজেডি আজও বিশ্ববাসী বিস্মৃত হয়নি। কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ এরা কি ভুলে গেছেন? ভারতের কেন্দ্রীয় সম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে একই কোরাসে অংশগ্রহণ করে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের স্বাধীন মর্যাদাকে অগ্রাহ্য করেছেন।
রিজভী বলেন, মমতার বক্তব্যে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার লুটেরা, খুনি, গুম ও নির্যাতনকারীদের পতন হওয়াতে তারা বিষণ্ন, বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন। হত্যা, গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস করে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দূরাচারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। এখন শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য ভারতের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকার একটি বিরাট অংশ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে বিদ্বেষ পোষণকারী ভারতের রাজনীতিবিদদের পেছনে খরচ করা হচ্ছে। তা না হলে এখন এভাবে একযোগে বাংলাদেশবিরোধী জিকির তুলছে কেন ভারতের নীতি নির্ধারকরা। আমরা এর আগেও দেখেছি- সে দেশের রাজনীতিবিদরা মুখে যাই বলুক, তারা যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন তার প্রমাণ হচ্ছে শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জির কারণেই তিস্তা নদীর পানির চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। সুতরাং তিনি কি উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বাহিনীকে বাংলাদেশে প্রেরণ করার প্রস্তাব করছেন এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে খোলাসা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, একটি অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লুটেরা রেজিমকে মদদ দিয়ে বিনিময়ে ভারত একতরফাভাবে অনৈতিক স্বার্থ ও ফায়দা হাসিল করছিল। ছাত্র-জনতা কর্তৃক জনস্বার্থবিরোধী ভারতের সেই তাঁবেদার রেজিম উৎখাতের ফলে ভারতের অনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ছেদ পড়ায় সেখানকার রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকরা এখন বেসামাল হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশ কীভাবে চলবে সেটি এ দেশের জনগণ নির্ধারণ করবে। কোনো দেশের গভীর চক্রান্তের নীল নকশা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না।
রিজভী বলেন, ৮১ শতাংশ সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেশ নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উষ্ণ যেমন নয়, তেমনি নেপালের জনগোষ্ঠীও ভারতের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন তো নয় বরং বৈরী ভাবাপন্ন। তাই বুঝতে হবে, বাংলাদেশ সনাতন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের প্রতি ভারতের অতি ভালোবাসা প্রকাশ ও এটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রতি হম্বিতম্বির পেছনে ভারতের কোনো ধর্মীয় ভাবাবেগ, ভালোবাসা বা বন্ধন জড়িত নেই, আছে এটিকে পুঁজি করে ভারতের আধিপত্যবাদী আগ্রাসী মনোভাব ও ষড়যন্ত্র। আমি ভারতের পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তাদের বিধান সভায় দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান দেশবাসী ভাই-বোনদের পার্শ্ববর্তী দেশের গভীর চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।