বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক নেতা ও শিক্ষার্থীরা একেক রকম দাবি করছেন। এতে হামলার ঘটনায় বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের শিক্ষকদের স্বজন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার দাবি করেছেন তালা যারা ভেঙেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি হামলাকারীরা বহিরাগত। শিক্ষকদের মদদে তারা অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রেলপথ অবরোধ করে ঢাকা ময়মনসিংহে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বাকৃবির ট্রেজারি ভবন ও পূবালী ব্যাংক থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। মিছিল আর স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রেজিস্ট্রার সই করা এক ‘কর্তৃপক্ষীয় ভাষ্য’ জারি করে। সেখানে বলা হয়, ‘শিক্ষকদের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা শিক্ষকরা যখন অবরুদ্ধ ছিলেন সেসময় মিলনায়তনের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তাদের বহিরাগত আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকানো হয় এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়।’
অন্যদিকে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কম্বাইন্ড ডিগ্রি আন্দোলন নিষ্পত্তি কমিটির সদস্যসচিব ও বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, তালাবদ্ধ অবস্থায় অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে আমিও ছিলাম। এরমধ্যে একজন শিক্ষিকা ভেতরেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। একপর্যায়ে দেখি একদল লোক এসে তালা ভেঙে ফেলেছে। এমতাবস্থায় অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে আমিও বাহিরে বের হই। তখন আমি অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের দেখেছি। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকেও দেখেছি। বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবরুদ্ধ শিক্ষকদের বাইরে বের করে এনেছেনে। তাদের সঙ্গে বহিরাগতরা এসেছিল কিনা আমার জানা নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বহিরাগতরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয় ও ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে বহিরাগতরা তালা ভেঙে দিলে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বেরিয়ে যান। বহিরাগতরা পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে শিক্ষকদের মুক্ত করেন। হামলার পর থেকে দায় চাপানোর খেলা চলছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় ও শিক্ষকদের মদদে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, আহত করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সামান্য দুঃখ প্রকাশও করেনি। আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ শিক্ষক সমিতির ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে এ হামলার বিচার হবে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এদিকে অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতিও দিয়েছে তার নিজ অনুষদের (কৃষি অনুষদ) শিক্ষার্থীরা। বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে নৃশংস হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই, আসাদুজ্জামান সরকার স্যার বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন অনুষদকে জড়িয়ে যেই বিবৃতি দিয়েছেন সেই ঘটনায় কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল হক হিমেল বলেন, বহিরাগতদের দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করানো হয়েছে। আমরা শিক্ষকদের সন্তানতুল্য। শিক্ষিকাদের কাছে এটি অপ্রত্যাশিত। বহিরাগতরা প্রকাশ্যে হামলা করেছে, অথচ তা অস্বীকার করা হচ্ছে। আমাদের ৬ দফা দাবি মেনে না নিলে আন্দোলন চলমান থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, তখন রাত ছিল। কয়েকজনের হাতে লাঠি দেখা গেছে। তবে তাদের চিনতে পারিনি। ঘটনায় জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করাসহ পুরো ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, শতভাগ দাবি মেনে নেওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে। দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার কারণে শিক্ষকরা প্যানিকড ও ট্রমায় পড়ে যান। বহিরাগতদের দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করা হয়েছে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/এএমএ