শিক্ষার্থীদের ২ দাবি মেনে নিলো প্রশাসন, আন্দোলন সাময়িক স্থগিত

4 hours ago 6

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে দুটি দাবি মেনে নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়ে শেষ হয় রাত সাড়ে ১১টায়। এরপর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শহিদুল হক।

তিনি আরও জানান, বহিরাগতদের হামলায় শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে, এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি করার পূর্বের নির্দেশ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া হলগুলোতে চলমান সব ধরনের সুবিধা নিরবিচ্ছিন্ন রাখা হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল হক হিমেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। এ সময় ভার্চুয়ালি উপাচার্য স্যার যুক্ত ছিলেন। আমাদের সবগুলো দাবি মেনে নিতে হবে। কারণ, আমাদের সবগুলো দাবি যৌক্তিক। আন্দোলনে যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল, তাদের প্রশাসনিক বা অ্যাকাডেমিক কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্ট করা হবে না বলে উপাচার্য স্যার আমাদের আশ্বস্ত করছেন।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা বলেছি, লিখিতভাবে এটি প্রকাশ করতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা হবে। এ সময় কম্বাইন্ড (একক) ডিগ্রির দাবিটি মেনে নিতে হবে। তা না হলে আবারও আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবির বিষয়টি মেনে নিলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাবো।

বৈঠকে উপস্থিত চতুর্থ বর্ষের পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান দীপু জানান, আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বুধবারের (৩ সেপ্টেম্বর) জন্য তাদের ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত করেছে। বাকি চারটি দাবিও মেনে নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের দুটি দাবি মীমাংসা হয়েছে। অন্য চারটি দাবি ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হবে।

অন্য চারটি দাবি হলো- ১. এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর শিক্ষকদের মদদে বহিরাগত দিয়ে হামলার দায়ে প্রক্টোরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে। ২. বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ককটেল বিস্ফোরণ, লাইব্রেরি ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং দেশীয় অস্ত্র দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার ঘটনার জন্য উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. হামলার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকবৃন্দ: কৃষি অনুষদের আসাদুজ্জামান সরকার, তোফাজ্জল স্যার, শরীফ আর রাফি স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, পশুপালন অনুষদের বজলুর রহমান মোল্যা স্যার, জেনেটিক্সের মুনির স্যার, ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের আশিকুর রহমান স্যার এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. গত ১ মাস ধরে চলমান যে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেই একক ডিগ্রি অবিলম্বে দিতে হবে। তিনটি ভিন্ন ডিগ্রি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদ একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে গত একমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (৩১ আগস্ট) রাতে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে স্লোগানে উত্তাল করে তোলেন পুরো ক্যাম্পাস। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৯টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন‍্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সব ছাত্র-ছাত্রীদের সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে হলত‍্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে এদিন সকালে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এএমএ

Read Entire Article