বাগেরহাটে হরতালে দুর্ভোগ চরমে

5 hours ago 3

বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা দিনব্যাপী হরতালে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রোববার (২৪ আগস্ট) ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া ১২ ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে সবধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বন্ধ রয়েছে পণ্য পরিবহন।

বাগেরহাট মহাসড়কের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের নওয়াপাড়া, কাটাখালি, মোল্লাহাট সেতু, বাগেরহাট পিরোজপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড বাজার, খুলনা মোংলা মহাসড়কের ফয়লা, মোংলা বাসস্ট্যান্ডসহ জেলার অন্তত দশটি স্থানে সড়কের ওপর গাড়ি, গাছের গুঁড়ি ও বেঞ্চ রেখে অবরোধ করছেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।

খুলনা থেকে মোড়েলগঞ্জের কালিকাবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রোববার (২৪ আগস্ট) সকালে রওনা হওয়া মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, আমি অসুস্থ অবস্থায় ভোরে খুলনা থেকে বের হলেও হরতালের কারণে এখন পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছাতে পারিনি। খুলনা থেকে কাটাখালি পর্যন্ত আসার পর আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে অন্য গাড়িতে দশানী পর্যন্ত আসতে তিন চার জায়গা বাধার সম্মুখীন হয়েছি। এখান থেকে আবারো গাড়ি বন্ধ। এখন মোড়েলগঞ্জের কালিকাবাড়ি কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না। আন্দোলন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরাও। স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, খুলনা সিটি কলেজে আমার পরীক্ষা। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ধাপে ধাপে বাধা অতিক্রম করে বাগেরহাট নতুন কোর্ট পর্যন্ত এসেছি। এখন সাড়ে ১০টা বাজে অথচ এখনো বাগেরহাট ছাড়তে পারিনি।

মো. মিজান নামের এক ব্যক্তি জানান, মাকে নিয়ে খুলনার ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য মোড়েলগঞ্জ থেকে সকাল ৯টায় রওনা হয়েছেন। ১১টা ৫০ এ কাটাখালি মোড়ে পৌঁছান। তবে এখানে এসে আর বাধা অতিক্রম করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘রাস্তার ওপর গাছ ফেলে আটকে রাখা হয়েছে। মাকে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছি। যারা রাস্তা আটকে রেখেছে তাদের রাস্তা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’

তাদের মতো এমন আরও বহু মানুষ পড়েছেন একই দুর্ভোগে। আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা ও ভ্যান সামান্য চললেও বাস টার্মিনাল থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এতে কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

বাগেরহাট সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা জামাতের সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মাদ ইউনুস বলেন, বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে আমরা গত ৩০ জুলাই তিনটি আসনের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকে বাগেরহাটে আন্দোলন করে আসছি। কখনো সংবাদ সম্মেলন, কখনো রাজপথ অবরোধ আবার নির্বাচন অফিসে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপরেও নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাব থেকে ফিরে আসেনি। যার কারণে আমরা আজকে সর্বত্র অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, জেলার সর্বস্তরের জনগণ আমাদের দাবির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে হরতাল ও অবরোধ সফল করছেন। কোনো দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। মোংলা বন্দর এলাকারও বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ। আশা করি নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবি মেনে নেবে। তা না হলে এর থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দিলে জেলায় নাগরিকরা আন্দোলন শুরু করেন। এই প্রস্তাব বাতিল ও চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে নাগরিকদরে প্ল্যাটফর্ম সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। আগামী ২৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নাহিদ ফরাজী/এমএন/এমএস

Read Entire Article