বাবা-মেয়ের আবেগঘন মুহূর্ত ভাইরাল, মুগ্ধ নেটিজেনরা

3 weeks ago 19

ব্যবসা শেষে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছিল বাবা। শব্দ পেয়ে খুলে দিলেন মেয়ে। বাড়িতে হঠাৎ মেয়েকে দেখে কিছু সময়ের জন্য হতভম্ব বাবা হয়ে গেলেন আবেগাপ্লুত। এরপর তৈরি হলো বাবা-মেয়ের এক আবেগঘন মুহূর্তের পরিবেশ।

সম্প্রতি নওগাঁয় ঘটে যাওয়া বাবা-মেয়ের ভালোবাসার এমন এক আবেগঘন মুহূর্ত এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন পর বাড়িতে এভাবে মেয়েকে সামনে দেখে বাবা আবেগ ধরে রাখতে না পেরে জড়িয়ে ধরলেন আপন মেয়েকে। আর এই দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়ে গেছে হাজারো মানুষের।

জানা যায়, নওগাঁ শহরের দয়ালের মোড়ে বসবাস নূর মোহাম্মাদ নান্টু নামের এক ব্যবসায়ীর। মেয়ে লামিয়া জান্নাতকে বিয়ে দিয়েছেন চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করছিলেন লামিয়া জান্নাত। বাবার বাড়িতে অনেক দিন আসা হয়নি তার। হঠাৎ করেই কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই বাবার কাছে চলে আসেন মেয়ে। দরজার কড়া নাড়ার পরপরই ঘরের দরজা খুলে লামিয়াকে সামনে দেখতে পান বাবা নূর মোহাম্মাদ নান্টু। মুহূর্তেই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি। এক নিমিষেই মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কপালে কপাল লাগিয়ে স্নেহ আর আদরে ভরিয়ে দেন।

এই আবেগঘন মুহূর্ত মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেন লামিয়ার ছোট বোন মালিহা জান্নাত। তারপর লামিয়া নিজেই তার ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন।  মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর অসংখ্য মানুষ আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। কেউ লিখেছেন, ‘বাবা-মেয়ের ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র সম্পর্ক।’ আবার কেউ কেউ নিজের বাবার সঙ্গে কাটানো স্মৃতির কথা মনে করে আবেগ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, রাহাতসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন, এমন দৃশ্য যে কাউকেই নাড়া দেয়। একজন অভিভাবক সন্তানের প্রতি যে অকৃত্রিম ভালোবাসা পোষণ করেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বাবারা বুঝি এমনই হয়।

লামিয়ার বাবা নূর মোহাম্মাদ নান্টু বলেন, ‘গত চার দিন আগে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। লামিয়া ফাস্ট ক্লাসে পাস করেছে ফোন করে খবরটা আমাকে জানাই। অভিনন্দন জানিয়ে ভালো রেজাল্ট করার জন্য মেয়েকে কিছু উপহার দিতে চাই। কিন্তু মা তুমি তো কাছে নেই। তোমাকে দেখতেও মন চাইছে খুব। এই বলে ফোনে কথা বলা শেষ হয়। কিন্তু তার পরদিন রাতে বাসায় গিয়ে দরজা নক করে ভিতরে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে লামিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তখন কি যে প্রশান্তি অনুভব করলাম বলে বোঝাতে পারবোনা। আর ছোট মেয়ের ধারণ করা সেই দৃশ্যটি এখন ফেসবুকে অনেকে দেখেছে। অনেকে ফোন করছে। এমনকি আমার কাছে এসেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।’

নান্টু বলেন, আমার ছেলে নেই, ‘তিনটি মেয়ে। আমার কাছে তিন মেয়েই পৃথিবী। মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা পৃথিবীর অন্য সব সম্পর্কের চেয়ে ভিন্ন। ভিডিওটি মানুষ এত সুন্দরভাবে নেবে ভাবতেই পারিনি। আসলে পৃথিবীর প্রতিটি বাবা চান, তাদের মেয়ে ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।’

অপরদিকে লামিয়া জান্নাত জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। কিন্তু বাবার প্রতি ভালোবাসা ও আদর স্নেহের টানেই না জানিয়ে হঠাৎ নওগাঁয় চলে আসি। ‘বাবা ফোন দিয়েছিলেন। বাবাকে দেখার আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল। তাই চমক দিতে বাড়িতে হঠাৎ চলে আসি। বাবা আমাদের কাছে শুধু বাবা নন, তিনি একজন বন্ধুও।’

নূর মোহাম্মাদ নান্টু পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। নওগাঁ শহরের সোনাপট্টিতে তার ‘খাজা জুয়েলার্স’ নামে একটি জুয়েলারি দোকান রয়েছে। ব্যবসার ব্যস্ততা আর জীবনের নানা টানাপোড়েনের কারণে অনেক সময় সন্তানরা বাবা–মায়ের সঙ্গে থাকতে পারেন না। তবুও এই ভাইরাল হওয়া ভিডিও আবারও স্মরণ করিয়ে দিল—সময়ের ব্যবধান যতই হোক না কেন, সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা কখনোই কমে না; বরং সময়ের সাথে তা হয়ে ওঠে আরও গভীর ও শক্তিশালী।
 

Read Entire Article