বামপন্থিরা কেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী’র ব্যানারে?

7 hours ago 6

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রকম আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ক্যাম্পাস এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে আন্দোলন বেগবান করতে বামপন্থি ছাত্রনেতারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের মূল সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার না করে, ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করতে এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ এখনো বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বামপন্থি শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ফলে এসব আন্দোলনকে অনেকেই বামপন্থি আন্দোলনের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বামপন্থি এসব নেতারা হলেন- শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, দপ্তর সম্পাদক নাঈম শাহ্ জান এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ। এছাড়াও শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আহ্বায়ক ধ্রুব বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের রিশাদ আমিন বর্ণ, নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুদর্শন চাকমা।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন তারা। পরবর্তীতে মশাল মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান করেন। এসময় তারা প্রক্টর অফিসের দেওয়ালে লাল রং নিক্ষেপ করেন।

জানা যায়, এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন বামপন্থি দল বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দেসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

এছাড়া শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় প্রক্টর অফিসের সামনে প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল বডির সংঘর্ষে চরম ব্যর্থতার দায় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারের আড়ালে থাকা এসব নেতারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক উম্মে সাবাহ তাবাসসুমসহ বামপন্থি নেতাকর্মীরা।

আবার শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘নিয়োগ বাণিজ্যের জমিদার ভবন’ লিখে দেন বামপন্থি এই নেতারা। সেইসঙ্গে গ্রাফিতি অঙ্কন ও দেওয়াল লিখন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই কর্মসূচিরও নেতৃত্ব দেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে এবং নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার।

এসময় সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন ঘটনাস্থলে এলে তাকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে চবির সহকারী প্রক্টর নূরুল হামিদ কাননের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান এই নেতারা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলন করেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহ রিয়াজ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, এতদিন দেখেছি ‘শিবিরকে শিবির বললে ক্ষেপতো। এখন দেখতেছি ‘বাম’কে ‘বাম’ বললে তারাও ক্ষেপতেছে। অপরদিকে শিবির ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানার ইউজ করার কারণে বামপন্থিদের কী কী ট্রল! কী প্রতিবাদ! এখন তারা কিন্তু ঠিকই ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যনার ব্যবহার করতেছে। জোশ! এই হিপোক্রেট জাতিকে লইয়া আমি কোথায় যাইব?’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীর রওশন আলী বলেন,‘আমার মনে হয় বামপন্থিরা তাদের দায় এড়ানোর জন্যই মূলত এমন পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা শনিবার সহকারী প্রক্টরকে হেনস্তা করেছে, এখন চাইলেই কিন্তু আমরা কোনো বামপন্থি সংগঠনকে এই দায় দিতে পারব না। তবে হেনস্তা বামপন্থিরাই করেছে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দর ব্যানারে।’

‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জশদ জাকির জাগো নিউজকে বলেন, আপনি দেখা করলে কথা বলবো। সামনাসামনি দেখা না করে কথা বলবো না বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ও চবি শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, গত ৩০ এবং ৩১ তারিখের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ। অনেক শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন, কিন্তু দলীয় ব্যানারে আসতে চাননি। তাই সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্দোলন করার চেষ্টা। যেহেতু দীর্ঘ ১২ মাস ধরে প্রশাসনের ব্যর্থতা, উদাসীনতা ও অনীহা রয়েছে সে জায়গা থেকে একত্রিত হওয়া।

তিনি আরও বলেন, দলীয় ব্যানারে আন্দোলন না করার কারণ যারা ব্যানারে আসতে চায় না তাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আন্দোলনটা করা। এমনকি প্রেস বেফ্রিং করার সময় আমরা দলীয় নামবিহীন লোকদের নিয়ে করিয়েছি।

নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, প্ল্যাটফর্মটি চলতি ঘটনার প্রেক্ষিতে নির্দলীয়দের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তৈরি করা। আন্দোলনতো এখনো চলছে, আন্দোলন সফল হওয়ার পরবর্তী সময়ে আমরা ভেবে দেখবো প্ল্যাটফর্মটা থাকবে কি না। তবে এ মুহূর্তে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে’কে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ফোন করা হলে সাড়া পাওয়া যায়নি।

এসআরএ/এফএ/জেআইএম

Read Entire Article