যশোরের অভয়নগরে এক হিন্দু পরিবারের জমিসহ বাড়ি দখল ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই পরিবারের দাবি, স্থানীয় বিএনপি নেতার দুই ছেলে ১৭ ফেব্রুয়ারি তাদের জমি দখল করে নেন। এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌরসভার প্রফেসারপাড়া মহিলা কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা পরিমল কান্তি কর্মকার, তার ছেলে পিয়াস কর্মকার ও স্ত্রী বিউটি কর্মকার।
সংবাদ সম্মেলনে পিয়াস কর্মকার বলেন, বিএনপি নেতা এফএম আলাউদ্দিন আমাদের প্রতিবেশী। তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাদের পরিবারের নানাভাবে ক্ষতি সাধন করে আসছিলেন। তাদের অত্যাচারে আমাদের সেখানে বসবাস করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। ২০১৬ সালে আলাউদ্দিনের ছোট ছেলে এফএম রাব্বি ও তার গুণ্ডাবাহিনী আমাদের বসতবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে।
তিনি আরও বলেন, এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে মা বিউটি কর্মকার অভয়নগর থানায় একটি মামলা করতে বাধ্য হন। যে মামলাটি এখনো চলমান। এরপর থেকে আমরা প্রাণভয়ে নিজ বসতভিটা ছাড়া। আলাউদ্দিনের দুই ছেলে এফএম রাজু আহমেদ ও এফএম রাব্বি বর্তমানে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা।
ভুক্তভোগী পরিমল কর্মকার ও পিয়াস কর্মকার আরও বলেন, মামলা করায় আলাউদ্দিন পরিবার ক্রোধান্বিত হয়ে আমাদের ওপর নানাবিধ হুমকি-ধমকি, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। ২০১৭ সাল থেকে যশোর শহরে বসবাস শুরু করার পর থেকে আমাদের অভয়নগরের বাড়িটি তালা দেওয়া ছিল।
‘সবশেষ চলতি বছরে ১৭ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা পরিমল কান্তি জানতে পারেন যে, এফএম আলাউদ্দিন, তার দুই ছেলে ও চাচা থানা বিএনপি নেতা এফএম গিয়াস উদ্দিন আমাদের বাড়িটি দখল করে নেয় এবং সেখানে তালা লাগিয়ে দেয়। আমার বাবা তাৎক্ষণিক বাড়িতে গিয়ে দেখতে পারেন যে বাড়িতে তালা দেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে পিয়াস কর্মকার আরও বলেন, বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে আলাউদ্দিনের দুই ছেলে এফএম রাজু আহমেদ ও এফএম রাব্বি বাসায় প্রবেশ করে এবং আমার বাবা পরিমল কান্তি কর্মকারের ওপর হামলা করে ও তাকে ইট দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এরপর তাকে একটি কক্ষে আটকে নির্যাতন চালায়। এছাড়া নগদ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
‘পরবর্তীতে আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো পর্যন্ত আমাদের বসতবাড়িটি তালাবদ্ধ করে রেখেছে অভিযুক্তরা। আমার পরিবার কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা এফএম আলাউদ্দিন বলেন, পরিমল বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় অনেকের নামে মামলা করে হয়রানি করেছিল। সেই মামলা মীমাংসার নামে তারা মোটা অংকের টাকা নেয়। এরপর তারা বাড়িটি একটি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে যশোরে চলে যান। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক বাড়িতে তালা মেরে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি জমি ও বাড়ি পরিমলের। আমরা কেন সেটা দখল করতে যাবো। পরমিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এলাকায় এলে পাওনাদারেরা তাকে মারপিট করে। খবর পেয়ে আমি তাকে উদ্ধার করে যশোরে পাঠিয়েছি। স্থানীয়দের সঙ্গে তার যে সমস্যা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে দেবো।
মিলন রহমান/জেডএইচ/জেআইএম