বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ইসলামি দলগুলোর ঐক্য
মর্যাদার আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৫ (সিটি-সদর)। আসনটি বেশিরভাগ সময় বিএনপির দখলে ছিল। এই আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি ও হুইপ হয়েছিলেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও আসনটি ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে প্রমাণ করতে এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। পাশাপাশি এ আসনে জয়ী হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো ইসলামি দলগুলো। ফলে বিএনপির জয়ের পথে চ্যালেঞ্জ ইসলামি দলগুলো। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভক্ত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত চার বছর ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বরিশাল মহানগর বিএনপি। এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সরিয়ে তার বিরোধী পক্ষকে নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করার মধ্য দিয়ে। এমনকি কমিটিতে সরোয়ারের সমর্থকদেরও দলীয় কোনো পদে রাখা হয়
মর্যাদার আসন হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৫ (সিটি-সদর)। আসনটি বেশিরভাগ সময় বিএনপির দখলে ছিল। এই আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি ও হুইপ হয়েছিলেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও আসনটি ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে প্রমাণ করতে এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। পাশাপাশি এ আসনে জয়ী হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো ইসলামি দলগুলো। ফলে বিএনপির জয়ের পথে চ্যালেঞ্জ ইসলামি দলগুলো।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভক্ত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিগত চার বছর ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বরিশাল মহানগর বিএনপি। এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সরিয়ে তার বিরোধী পক্ষকে নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করার মধ্য দিয়ে। এমনকি কমিটিতে সরোয়ারের সমর্থকদেরও দলীয় কোনো পদে রাখা হয়নি। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে তার অনুগত ওয়ার্ড কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বরিশাল-৫ আসনে আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সরোয়ার। মনোনয়ন পাওয়ার পর বিবদমান সব বিভেদ ভুলে এক সভায় তার পক্ষে এককাট্টা হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এবায়েদুল হক চাঁন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।
বরিশাল-৫ আসনে সবচেয়ে বেশিবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি টানা তিনবারসহ চারবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংসদের হুইপও ছিলেন।
অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি এটা সবাই জানেন। দল অতীতের সবকিছু পর্যালোচনা করে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন:
আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি, বসে নেই জামায়াত
বিএনপি-জামায়াতের চিন্তার কারণ হতে পারেন অভি
ফুয়াদের জন্য আসন ছাড়লে কপাল পুড়বে সেলিমা-জয়নুলের
তরুণ নেতৃত্বে ভরসা বিএনপির, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জামায়াত
ভোটারদের কাছে টানতে যুবকদের প্রাধান্য দিচ্ছে জামায়াত
তিনি আরও বলেন, ‘ধানের শীষ শুধু একটি প্রতীক নয়, এটি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতীক। যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়েই তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে।’
আসনটি ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত থাকলেও গণঅভ্যুত্থানের পর এখানে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বহুগুণে বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দুই দল থেকেই শক্ত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হয়ে মাঠে আছেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। দুজনই অভিজ্ঞ, আস্থাভাজন এবং শক্তিশালী প্রার্থী। তাই বরিশাল-৫ আসনে জয়ী হতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরোয়ারকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৭ বছর জামায়াতে ইসলামী রাজপথে দাঁড়াতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে নিজেদের অবস্থান গড়েছে, যা সামনে আসে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থকও বেড়েছে অনেকগুণ। যে কারণে আসন্ন নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোতে নির্বাচনি সমঝোতা হলে এ আসনটি বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী-বিএনপির ৫৩ বছরের অদল-বদল রাজনীতির পরিবর্তে নতুন ধারার রাজনীতির জন্যই মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নেবে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতের বিকল্প নেই। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষ ভুল করবে না বলে আমি শতভাগ আশা করছি।’
এ আসনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মনোনীত প্রার্থী দলটির বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ভূমিকা রেখেছেন।
অন্য দলগুলোর মধ্য থেকে খেলাফত মজলিসের একাংশের হয়ে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অধ্যাপক একেএম মাহবুব আলম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মুফতি সুলতান মাহমুদকে। যদিও ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রশ্নে তারা ছাড় দিতে রাজি বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।
এর বাইরে সুযোগ পেলে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপসও প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আসন ছেড়ে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ইসলামি দলগুলোর একক প্রার্থী থাকবে। তবে কে কোন আসনে তা এখনো ভাগাভাগি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ইসলামী আন্দোলনের ভালো একটা অবস্থান রয়েছে। যে কারণে আসন সংখ্যার দিক থেকে ইসলামী আন্দোলন বরিশালে বেশি আসন পাবে।’
বাসদের মনীষা চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার সাধারণ মানুষদের জন্য সবসময় আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে বরিশালের উন্নয়নের জন্য কাজ করবো।’
বরিশাল-৫ আসনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৯, নারী ভোটার দুই লাখ ৩২ হাজার ৯১৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।
এসআর/এমএমএআর/এমএস
What's Your Reaction?