‘বিচার বিভাগের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে’

3 months ago 50

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা।

শুক্রবার (১৭ মে) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সিলেট বিভাগের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের সংস্কার ব্যতিরেকে রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সভায় উপস্থিত বিচারকগণ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারে রোডম্যাপ অনুযায়ী পৃথক ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ গঠনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব হেমায়েত উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন ব্যালাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম (জেলা ও দায়রা জজ)। সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা থেকে সকল পর্যায়ের বিচারকগণ এ সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সভায় আলোচকগণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং এই ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আদালতের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা বিচারিক কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করছে মর্মে আলোচকগণ উল্লেখ করেন। বক্তারা বলেন, জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত থাকায় বিচার বিভাগ প্রায়শই অযাচিত হস্তক্ষেপের শিকার হয়। বাজেটে অপ্রতুল বরাদ্দ বিচার বিভাগের সক্ষমতাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। আলোচকগণ জেলা আদলতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি ও শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করার এবং বিচারকদের পদ সৃজন, বাজেট প্রণয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান।

সভায় মাসদার হোসেন মামলার ৬ নম্বর নির্দেশনার আলোকে একটি স্বতন্ত্র পে-কমিশন গঠনের দাবিও জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। আলোচকগণ বলেন, বিচারকগণ সংবিধানের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাই তাদের সম্মানীও সেই গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রতিফলন হওয়া উচিত। বক্তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য একটি ন্যায্য ও কার্যকর গ্রাফিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। বিশেষ করে বিচারকদের জন্য বর্তমান বেতন স্কেলের ৩০% হারে বকেয়াসহ ‘জুডিসিয়াল জাতা’ প্রদান এবং পূর্ববর্তী পে-কমিশনগুলোর সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতি বৈষম্যের ইঙ্গিত দিয়ে সভায় আলোচকগণ জানান, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে জেলা আদালতের বিচারকদের জন্য ন্যায্য প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলা আদালত থেকে সমতা রক্ষা করে বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।

সভায় বিচারকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে একটি কার্যকর প্রেসার গ্রুপ হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বিচার বিভাগের আধুনিকীকরণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগসমূহ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে, যা উপস্থিত বিচারকবৃন্দ অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেন এবং অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। 

Read Entire Article