বিদেশেও বড় হচ্ছে বাংলাদেশি সেমাইয়ের বাজার

6 hours ago 4

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা ঈদে বাংলাদেশি সেমাই খেতে পছন্দ করেন। ভারত-পাকিস্তানের প্রবাসীদের কাছেও রয়েছে চাহিদা। দেশের পাশাপাশি তাই ক্রমে বড় হচ্ছে বিদেশের বাজার। বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাই এখন বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ওইসব দেশেও এখন উৎসব ও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক পণ্যের শীর্ষে বাংলাদেশি সেমাই।

দেশে প্রতি বছর সেমাইয়ের চাহিদা বাড়ছে প্রায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে। দেশ-বিদেশের এ বাড়বাড়ন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দেশি করপোরেট কোম্পানিগুলো। এখন আগের মতো আর খোলা সেমাইয়ের বাজার নেই। আগে বেকারিতে বানানো খোলা সেমাইয়ের বাজার বড় থাকলেও এখন সেটা ব্র্যান্ডের দখলে চলে গেছে।

দেশের সেমাই উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। দেশে সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে সেমাই বিক্রি হয়। তবে সেমাইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে দুই ঈদের সময়। এখন ঈদের আগে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সেমাইয়ের বিক্রি বেড়েছে।

বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। আগে শুধু ঈদে সেমাই খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও এখন বছরজুড়েই এ খাদ্যপণ্যটির চাহিদা থাকে। ফলে সেমাইয়ের বাজারও বিস্তার লাভ করছে।- বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান

তথ্য বলছে, দেশে বছরে সেমাইয়ের চাহিদা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন। দেশে ৪০টির বেশি কোম্পানি রয়েছে, যারা তাদের উৎপাদিত সেমাই মোড়কজাত করে বিক্রি করে। এসব কোম্পানির বাইরে অনেক মৌসুমি প্রতিষ্ঠান উৎসবকেন্দ্রিক খোলা ও মোড়কজাত সেমাই উৎপাদন করে। তবে এ বাজারে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বড় বড় কোম্পানি। যারা রপ্তানিতেও বড় সাফল্য দেখিয়েছে গত কয়েক বছর।

Eid, Eid Market, Export, Bazar, Pran Group, Food, Product, Special Reportsবিদেশেও বড় হচ্ছে বাংলাদেশি সেমাইয়ের বাজার

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে চাহিদা বছরজুড়ে

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে চিত্র কিছুটা বদলেছে। সেমাই এখন পরিণত হয়েছে অনেকের নিত্যনৈমিত্তিক খাবারেও। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও থাকে চাহিদা। এ অল্প সময়ের মধ্যে সেমাইয়ের বাজারেও এসেছে একটি বড় পরিবর্তন। আগে বাজারে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি খোলা সেমাইয়ের প্রাধান্য থাকলেও এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কজাত সেমাই বেশি বেচাকেনা হতে দেখা যায়। বিদেশে রপ্তানিও দ্রুত বাড়ছে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে পণ্যটির বাজার এখন হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দিন দিন বাজারে সেমাইয়ের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে রপ্তানিও। প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’

বিদেশেও সেমাইয়ের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। সারা বছর যে পরিমাণে সেমাই রপ্তানি হয়, এর ৭০ শতাংশ ঈদকেন্দ্রিক। ওইসব দেশেও এখন উৎসব ও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক পণ্য বাংলাদেশি সেমাই।- ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ

মোড়কজাত সেমাই উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। আগে শুধু ঈদে সেমাই খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও এখন বছরজুড়েই এ খাদ্যপণ্যটির চাহিদা থাকে। ফলে সেমাইয়ের বাজারও বিস্তার লাভ করছে।’

Eid, Eid Market, Export, Bazar, Pran Group, Food, Product, Special Reportsবিদেশেও বড় হচ্ছে বাংলাদেশি সেমাইয়ের বাজার

সেমাইয়ের বাজারে এখন বড় বড় কোম্পানি নেতৃত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক দশক আগেও দেশে সেমাইয়ের উৎপাদন অর্ধেকের কম ছিল। করপোরেট কোম্পানিগুলো এ বাজারকে ভিন্নমাত্রায় এনেছে। বেশকিছু কোম্পানি সেমাই রপ্তানি করছে। মানুষ এখন স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশ যত্নশীল, সেটাও সেমাইয়ের বাজার বড় হওয়ার কারণ।’

রপ্তানি হচ্ছে ৪০ দেশে

জানা যায়, আমেরিকা-ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সেমাই রপ্তানি করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে প্রাণ, স্কয়ার, বনফুল, কিশোয়ান, ইস্পাহানি, ড্যানিশ, রোমানিয়া, কোকোলা, ডেকো, ওয়েল ফুডের মতো কোম্পানি দেশ-বিদেশে সেমাই রপ্তানি করছে। বড় বিনিয়োগ, উন্নত প্রযুক্তি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অঙ্গীকারে এসব প্রতিষ্ঠানের সেমাই এখন গ্রাহক চাহিদার শীর্ষে। রপ্তানি দেশের সংখ্যা এখন ৪০টি।

ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদেশেও সেমাইয়ের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে। সারা বছর যে পরিমাণে সেমাই রপ্তানি হয়, এর ৭০ শতাংশ ঈদকেন্দ্রিক। ওইসব দেশেও এখন উৎসব ও অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক পণ্য বাংলাদেশি সেমাই।’

আঞ্চলিক ব্র্যান্ডেরও রয়েছে কাটতি

খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, সেমাইয়ের বাজার মোটা দাগে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এগুলো হলো- সাধারণ বেকারির তৈরি, ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক ব্র্যান্ড এবং প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদিত সেমাই। সাধারণ বেকারির মধ্যে আবার অধিকাংশ শুধু ঈদকেন্দ্রিক। অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ডও রয়েছে। যেমন- উত্তরবঙ্গে বগুড়ার আকবরিয়া একটি জনপ্রিয় সেমাইয়ের ব্র্যান্ড। ওই এলাকা থেকে এশিয়া, শ্যামলী, কোয়ালিটি, খাজা বেকারি, ফুড ভিলেজের মতো আরও বেশ কিছু ব্র্যান্ড সারাদেশে সেমাই বিক্রি করছে।

ঈদের চাহিদার কারণে প্রাণ পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করে সেমাই উৎপাদন করছে প্রাণ। গত বছরের চেয়ে এবছর সেমাইয়ের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মতো। পুরোদমে রপ্তানিও হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন ভালো সেমাই বিক্রি হচ্ছে।- প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জমান

দেশের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো সেমাই তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পর ছোট বেকারিগুলো এ পণ্যটির উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। একসময় স্থানীয় কারখানায় তৈরি সেমাই জনপ্রিয়তা পেলেও এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বড় কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না মাঝারি বা ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশে সেমাইয়ের বড় ব্র্যান্ড বনফুল। কোম্পানিটি ১৯৮৯ সাল থেকে সেমাই উৎপাদন করছে। বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রুচির পরিবর্তন, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা- এ তিন কারণে এখন বাজারে প্যাকেটজাত সেমাইয়ের চাহিদা অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পণ্যটির রপ্তানিও বাড়ছে। শুধু ঈদে নয়, সেমাইয়ের ভালো চাহিদা এখন বছরজুড়েই।’

বনফুলের পরে বাজারে বড় কোম্পানি প্রাণ। লাচ্ছা ও সেমাই বিক্রি করে কোম্পানিটি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের চাহিদার কারণে প্রাণ পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করে সেমাই উৎপাদন করছে প্রাণ। গত বছরের চেয়ে এবছর সেমাইয়ের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মতো। পুরোদমে রপ্তানিও হচ্ছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন ভালো সেমাই বিক্রি হচ্ছে।’

দরদাম কেমন
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাচ্ছা সেমাইয়ের ২০০ গ্রামের প্যাকেট কোম্পানিভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোম্পানির চিকন সাদা সেমাইও ২০০ গ্রামের প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা। আর ঘিয়ে ভাজা বা স্পেশাল ৪০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। খোলা চিকন সেমাই ১২০-১৮০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত বছরও সেমাইয়ের দাম একই রকম ছিল বলে জানান বিক্রেতারা।

এনএইচ/এএসএ/জেআইএম

Read Entire Article