বিমার দাপট, ব্যাংক টেনে নামালো শেয়ারবাজার

5 days ago 5

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। লেনদেনে অংশ নেওয়া সিংহভাগ বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোর দাপট দেখানোর দিনে উল্টো পথে হেঁটেছে ব্যাংক কোম্পানিগুলো। অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম কমায় মূল্যসূচকেরও পতনে হয়েছে।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় সবকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের শেয়ার দাম কমায় বাজারটিতে সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেইসঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়া ও কমার তালিকায় সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম কমায় এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকা বড় হয়ে যায়। এতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। তবে সকাল ১১টার পর থেকে ব্যাংক, বিমাসহ অন্যান্য খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়তে থাকে। ফলে সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হয়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে এসে ব্যাংকের শেয়ার দামে ঢালাও দরপতন হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অন্য খাতের ওপরও। অবশ্য এর মধ্যেও বিমা কোম্পানিগুলো দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে। তবে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম কমায় সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৫টির। আর ৭২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে বিমা খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। আর ৩টির শেয়ার দাম কমেছে এবং ২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাকি একটি বিমা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। ব্যাংক খাতের চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ২৩টির দাম কমেছে।

এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৮৯টির দাম কমেছে এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩৮টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৩০টির দাম কমেছে এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৭টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৮২ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৩ লাখ টাকা।

এ লেনদেন সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্নি সিস্টেম, আইটি কনসালটেন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং লাভেলো আইসক্রিম।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২১ কোটি ১১ লাখ টাকা।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

Read Entire Article