বিলাসবহুল ১৭৪৮ গাড়ির তথ্য গোপন, হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি

6 hours ago 2

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) সাম্প্রতিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এক হাজার ৩৩৯ জন বিলাসবহুল গাড়ির মালিক কর ফাঁকি দিতে তাদের কর নথিতে গাড়িগুলোর তথ্য গোপন করেছেন। আর ৪০৯টি গাড়ির মালিক কোনো ধরনের আয়কর রিটার্নই জমা দেননি।

সিআইসি সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এসব গাড়ির মালিকেরা এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত নথি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে। সম্প্রতি পাঁচ হাজার ৪৮৯টি বিলাসবহুল গাড়ির কর নথি যাচাই বাছাই করছে সিআইসি।

সংস্থাটি জানায়, এসব গাড়ির প্রতিটির বাজারদর (শুল্ক ও করসহ) এক কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে। তালিকায় রয়েছে টয়োটা, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, জিপ, ল্যান্ড রোভার, অডি, রেঞ্জ রোভার, পোরশে, জাগুয়ার, বেন্টলি, রোলস-রয়েস, ক্যাডিলাক, মেসারাতি, টেসলা, ফেরারি ও ল্যাম্বোরগিনি।

আয়কর আইন অনুযায়ী, সব সম্পদের তথ্য কর নথিতে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। এসব তথ্য উল্লেখ না করলে আয়কর আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া, এ অপরাধে ফৌজদারি মামলাও করা যেতে পারে। আর ওইসব গাড়ি কেনায় যে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, আয়কর আইন অনুযায়ী সেই ক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, কর নথিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও গাড়িগুলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) রেজিস্ট্রেশনে আছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সিআইসি এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে মোট পাঁছ হাজার ৪৮৯টি বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজ পেয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার ৭১৯টির তথ্য কর ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪৮টির তথ্যের অসঙ্গতি ধরা পড়েছে, যেগুলোর বিষয়ে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া ৪৩টি গাড়ি রয়েছে, যেগুলোর আয়ের উৎস্য ব্যাখ্যা করা হয়নি। ওই গাড়িগুলোর ফাইলও পুনঃউন্মোচনের কথা বলা হয়েছে।

এসব গাড়ির মধ্যে পাঁচ হাজার ২৮৮টি গাড়ির মালিক কর অঞ্চল-৪১ এর আওতাধীন করদাতা। যার মধ্যে ৪৪২টি গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। গত পাঁচ করবর্ষ (ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত) ধরে বিআরটিএ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ তদন্ত পরিচালনা করছে সিআইসি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়ির তথ্য গোপনকারীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, তাদের পরিবার এবং বেশ কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানও।

সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব জানান, মালিকরা কর ফাইলে গাড়িগুলোর তথ্য উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ, গাড়ি কেনার সমপরিমাণ আয়ও তারা গোপন করেছেন। এর মানে এই আয় অবৈধ উৎস থেকেও আসতে পারে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর অফিসগুলোকে কর আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কোন গাড়ির সংখ্যা কত?
বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে ল্যাম্বরগিনি একটি, ফেরারি চারটি, টেসলা পাঁচটি, মাসরাতি ১২টি, ক্যাডিলাক ১৭টি, রোলস রয়েলস ২৫টি, বেন্টলি ২৯টি, জাগুয়ার ৭১টি, পোরশে ৮১টি, রেঞ্জ রোভার ২১৯টি, অডি ৪৮৬টি, ল্যান্ড রোভার ৫০৮টি, জিপ ৬৯৫টি, মার্সেডিজ ৭৭৪টি, বিএমডব্লিউ এক হাজার ২২৭টি ও ৩ হাজার সিসির বেশি শক্তিধর টয়োটা গাড়ি রয়েছে এক হাজার ৩৩৫টি।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘যেখানে কর ফাঁকি পাবো, সেখানে থেকেই ন্যায্য কর আদায়ের জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা তা নেবো। এটিই এখন আমাদের অগ্রাধিকার।’

এসএম/এমকেআর/এএসএম

Read Entire Article